জনগণের সমর্থন ছাড়াই ভারতকে উপহার: কিসের স্বার্থে আম ও ইলিশ পাঠাচ্ছে সরকার?

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫ ৮:০৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ৩০০ কেজি আম এবং বেনাপোল বন্দর দিয়ে গোপনে ৮০ কার্টুনে ৪০০ কেজি আম পাঠিয়েছেন।
এসব উপহার পাঠানো নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে। জনগণের একাংশ মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান না করে এমন উপহার পাঠানো দেশের স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশার পরিপন্থী।
উপহার পাঠানোর পেছনের কূটনৈতিক যুক্তি
প্রতিবছর আম ও ইলিশ উপহার পাঠানোকে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও কূটনৈতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সরকার মনে করে, এ ধরনের শুভেচ্ছা বিনিময় পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নানা কারণে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। বিশেষত, সীমান্ত হত্যা, পুশ-ইন, পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া, এবং ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা—এসব ইস্যুতে জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে।
ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কখনো ভারত, কখনো চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। এ বছর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চীনের কাছেও আম পাঠিয়েছে, যা ভারতের জন্য বার্তা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
বিতর্ক ও জনমত
সীমান্ত হত্যা, পুশ-ইন, বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা, এবং ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষার কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে।
সমালোচনার কারণ:
ভারতের সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি নিহত হচ্ছেন, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ বা কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ দেখা যায় না।
ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অপমানজনক বক্তব্যের পরও শুভেচ্ছা উপহার পাঠানোকে অনেকে আত্মসমর্পণমূলক ও আত্মমর্যাদাহানিকর মনে করেন।
দেশের ভেতরে খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে আম ও ইলিশের সংকট থাকলেও, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে উপহার পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক ও নাগরিক প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতারা মনে করেন, কূটনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখা জরুরি হলেও, দেশের স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশা উপেক্ষা করে একতরফাভাবে উপহার পাঠানো যৌক্তিক নয়। অনেকেই মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মান ও ন্যায্যতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
শেষ কথা
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে নানা জটিলতায় আবদ্ধ। সীমান্ত হত্যা, পানি সমস্যা, পুশ-ইন, ও অপমানজনক প্রচারণার বাস্তবতায় দেশের জনগণ ভারতের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা বা একতরফা উপহার পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। অনেকের মতে, কূটনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দেশের স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশা উপেক্ষা করে একতরফা উপহার পাঠানো যৌক্তিক নয় এবং তা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের উচিত দেশের স্বার্থ, সম্মান ও জনগণের প্রত্যাশাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
১৫৩ বার পড়া হয়েছে