সর্বশেষ

জাতীয়সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজা আজ
যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশে ফিরল শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ
দেশে ফেরার প্রস্তুতি তারেক রহমানের, ট্রাভেল পাস হাতে পেলেন
শহীদ ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে আসছে আজ
পত্রিকা অফিসে হামলায় মির্জা ফখরুলের নিন্দা, দায় সরকারের বলে মন্তব্য
সারাদেশওসমান হাদির মৃত্যুতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-ভাঙচুর, অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ
আন্তর্জাতিকগাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬১ ইসরায়েলি সেনার আত্মহত্যা
খেলাকলম্বিয়া কাপ ফাইনালে ভয়াবহ দাঙ্গা, পুলিশসহ আহত ৫৯
মতামত

জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশ ফিরে আসে পররাষ্ট্রনীতিতে এক নতুন দিগন্তে

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বৃহস্পতিবার , ২৬ জুন, ২০২৫ ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬–১৯৮১) ছিলেন এক অনন্য রাষ্ট্রনায়ক, যিনি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়, বৈদেশিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন।

১৯৭৫-৮১ সময়কালে তার শাসনামল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান, আঞ্চলিক নেতৃত্ব এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।

স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির সূচনা
জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাশীল পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপন। তিনি পূর্ববর্তী ভারত ও সোভিয়েত-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও ব্লক-নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তার শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে ওঠে, যেখানে দেশ নিজস্ব সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

SAARC-এর ধারণা ও আঞ্চলিক নেতৃত্ব
জিয়ার সবচেয়ে আলোচিত কূটনৈতিক উদ্যোগ ছিল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC)-এর ধারণা। তিনি বিশ্বাস করতেন, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতা স্থাপিত হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ১৯৭৭-৮০ সালের মধ্যে তিনি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আঞ্চলিক সংহতির ডাক দেন। তার এই উদ্যোগের ফলেই ১৯৮৫ সালে SAARC প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রধান প্ল্যাটফর্ম।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত শীতল। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে পাকিস্তান সফর করেন এবং সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৯৭৯ সালের চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষক, শিল্পী, গবেষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর বিনিময় ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার পথ সুগম হয়। যদিও সম্পদ ভাগাভাগি ও বিহারী প্রত্যাবাসন ইস্যু পুরোপুরি সমাধান হয়নি, তবুও এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা আনে।

মুসলিম বিশ্ব ও ওআইসি-তে সক্রিয়তা
জিয়াউর রহমান মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করেন এবং ওআইসি-তে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন।

তিনি ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও শ্রমবাজারে সহযোগিতা বাড়ান। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গঙ্গার পানিবণ্টন ও আঞ্চলিক পানি-সম্পদ ব্যবস্থাপনা
ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন ইস্যুতে জিয়া কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি নেপালকে এই আলোচনায় যুক্ত করার প্রস্তাব দেন এবং ১৯৭৭ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার ফলে বাংলাদেশ শুকনো মৌসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পেত। যদিও স্থায়ী সমাধান হয়নি, এটি আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

পশ্চিমা বিশ্ব ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক
জিয়াউর রহমানের সময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পশ্চিমা ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হোয়াইট হাউজ ও এলিসি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন।

চীনের সঙ্গে সামরিক ও অবকাঠামোগত সহযোগিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বিমান ও স্বাস্থ্যখাতে আধুনিকায়ন তার কূটনৈতিক সাফল্যের অংশ।

আসল কথা
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি ছিল বহুমাত্রিক, স্বকীয় ও বাস্তবমুখী। তার সময়কালে SAARC-এর ধারণা, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে গভীর সংযোগ, গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে আঞ্চলিক আলোচনা এবং পশ্চিমা ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা—এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করে এবং আজও দেশের বৈদেশিক নীতিতে তার প্রভাব স্পষ্ট।

দেশকে সম্মানজনক উচ্চতায় নিয়ে তিনি এখনো বাংলাদেশের জনগণের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাঁর এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আবার বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ ও জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

৮৩৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন