এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি, ২৮ জুন থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫ ৪:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং প্রতিহিংসামূলক বদলি আদেশ বাতিলের দাবি আদায় না হলে আগামী শনিবার (২৮ জুন) থেকে সারা দেশে রাজস্ব কার্যক্রমে 'কমপ্লিট শাটডাউন' পালনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, এই কর্মসূচি শুরু হলে আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমসসহ এনবিআরের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে পড়বে কাস্টম হাউস কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেলে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি কার্যক্রম এ কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে।
আন্দোলনকারীদের মতে, শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। এতে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে ঘাটতি পূরণে সরকারকে উচ্চ সুদে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হতে পারে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে বেকায়দায় ফেলতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা। তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান সরকারের একটি বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত থেকে পুরো রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন।
তাঁকে ‘সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা’ ও ‘প্রশাসনের শৃঙ্খলাভঙ্গের উসকানিদাতা’ বলেও উল্লেখ করেন নেতারা।
পরিষদ অভিযোগ করেছে, আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পাঁচজন কর্মকর্তাকে হঠাৎ বদলি করা হয়েছে, যা প্রতিহিংসামূলক ও চাকরিবিধির লঙ্ঘন। বদলি আদেশে তাঁদের এক দিনের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর এবং নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়।
বদলি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন:
উপকর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী (আয়কর গোয়েন্দা → ময়মনসিংহ কর অঞ্চল)
মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম (ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ → খুলনা)
মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ (এনবিআর → বগুড়া)
ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল (আয়কর গোয়েন্দা → কুমিল্লা)
নুসরাত জাহান শমী (কর অঞ্চল কুমিল্লা → রংপুর)
দাবি না মানলে লাগাতার কর্মসূচি
ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, সোমবার রাতের মধ্যে বদলি আদেশ বাতিল না হলে মঙ্গলবার ও বুধবার (২৪ ও ২৫ জুন) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা প্রকাশ’ কর্মসূচি চলবে।
শুক্রবারের মধ্যে দাবি না মানা হলে শনিবার থেকে সারা দেশে লাগাতার 'কমপ্লিট শাটডাউন' শুরু হবে।
এর আগে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে পৃথক দুটি বিভাগে ভাগ করে 'রাজস্ব নীতি' ও 'রাজস্ব ব্যবস্থাপনা' গঠনের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এনবিআর কর্মকর্তারা কর্মসূচিতে অংশ নেন। আন্দোলনের মুখে সরকার কিছুটা পিছু হটলেও এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ না হওয়ায় ক্ষোভ থেকে যায়।
নেতারা অভিযোগ করেন, এনবিআর চেয়ারম্যান তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন। ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনারের অনুমতি চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। বিনা আলোচনায় একটি একতরফা কমিটি গঠনের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে পুরো রাজস্ব পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
১৩৮ বার পড়া হয়েছে