সর্বশেষ

মতামত

ইসরাইল-ইরান উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: খোমেনি হত্যাচেষ্টা ও কূটনৈতিক সংকট

মনজুর এহসান চৌধুরী 
মনজুর এহসান চৌধুরী 

সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫ ২:২২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
২০২৫ সালের মাঝামাঝি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে নাটকীয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে।

একদিকে ইসরাইলের ধারাবাহিক সামরিক অভিযান, অন্যদিকে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা—দুই দেশের সংঘর্ষ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। এই সংকটের কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য: ইসরাইল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পরিকল্পনায় সম্মতি দেননি।

ইসরাইলের সামরিক কৌশল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়
ইসরাইল ২০২৫ সালকে ‘যুদ্ধের বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং গাজা ও ইরানকে কেন্দ্র করে একাধিক ফ্রন্টে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে। ইসরাইলি নিরাপত্তা সূত্র অনুযায়ী, গাজায় হামাসকে পরাজিত করা ও অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করা ছিল প্রধান লক্ষ্য। একইসঙ্গে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে ইসরাইল একাধিক আক্রমণ পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে ছিল তেহরানসহ ৮০টিরও বেশি স্থাপনায় বিমান হামলা।
এই ধরনের বড় ধরনের সামরিক অভিযানের আগে ইসরাইল প্রায়শই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ইসরাইলের সম্ভাব্য ইরান আক্রমণের প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছিল এবং ইসরাইলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র যদি ‘খারাপ চুক্তি’ করে, তাহলে তারা এককভাবেও হামলা চালাতে পারে।

সংঘাতের এক পর্যায়ে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, তাদের কাছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনিকে হত্যার একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা’ রয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, খোমেনিকে হত্যা করলে সংঘাত আরও বিস্তৃত ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে, যা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, “ইরান কি কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না। সুতরাং, তারা না করা পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হত্যার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আসবে না।” এই অবস্থান থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলকে স্পষ্টভাবে ‘না’ জানায় এবং কূটনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেয়।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরাসরি এই পরিকল্পনা নিয়ে মন্তব্য না করলেও, তিনি বলেন, “অনেক ভুয়া রিপোর্ট প্রচার হচ্ছে, এসব নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। তবে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব এবং যুক্তরাষ্ট্রও জানে তাদের জন্য কী ভালো।” ইসরাইলি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরান যদি ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে তারা কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইসরাইলের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, এই হত্যাচেষ্টা নিয়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ঘরানার অনেকেই ইসরাইলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনের বিরোধিতা করছেন, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রয়োজনীয়ভাবে আরেকটি যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন এখনও কূটনৈতিক সমাধানের আশা ছাড়েনি। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, “এখনো সময় আছে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার, আরেকটি বড় আক্রমণ আরও ভয়াবহ হতে পারে। ইরানকে অবশ্যই চুক্তি করতে হবে, নইলে তাদের আর কিছু বাকি থাকবে না।” একইসঙ্গে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইসরাইল-ইরান সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে, যেখানে সামরিক অভিযান ছাড়াও রাজনৈতিক হত্যার মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘না’ বলার সিদ্ধান্ত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে নয়, গোটা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় বার্তা দিয়েছে—এখনো কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা আছে, যদিও যুদ্ধের ছায়া ক্রমেই ঘন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কূটনীতি—সবকিছুই নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

১২৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন