নির্বাচনের আগে বিএনপির জোরদার মনোভাব প্রকাশ

বৃহস্পতিবার , ১২ জুন, ২০২৫ ৬:১৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশের রাজনৈতিক মহলে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
এই বৈঠকটি নির্ধারিত হয়েছে আগামীকাল শুক্রবার, হোটেল ডোরচেস্টারে, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত।
আশা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি কার্যকরী রোডম্যাপ নির্ধারণে দারুণ অগ্রগতি হবে। পাশাপাশি সংস্কার, বিচারপ্রক্রিয়া, এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আশা করছেন। এই বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব হ্রাস পাবে বলেও মনে করা হচ্ছে। দলীয় সূত্র মতে, এই বৈঠক জাতীয় ঐক্যের দরজা খুলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যাবে— বিএনপি ও সরকার একসঙ্গে পথচলা করছে।
বৈঠকের আগে লন্ডনে গেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তবে তিনি সরাসরি উপস্থিত থাকবেন না। ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বৈঠক হবে। এর মধ্যে, তিনি বিএনপির বর্তমান অবস্থান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, সংস্কার প্রক্রিয়া, গণহত্যার বিচারসহ নানা বিষয় নিয়ে তারেক রহমানকে সহায়তা করবেন। বিশেষ করে, রোজার আগের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে জোর দেন তিনি, যা দলের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
সরকার-বিএনপি মধ্যে নির্বাচনকালীন সময়সূচি নিয়ে চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে এই বৈঠক নতুন করে আলোচনায় আসে। বিএনপির শঙ্কা রয়েছে, এপ্রিলে নির্বাচন হবে কিনা বা কবে হবে, তা নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের খবর আসে, যা অনেকের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তারেক রহমানের জন্য বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিএনপি নেতারা এই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, “এটি গঠনমূলক আলোচনার জন্য একটি সুযোগ, যা রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে।” তিনি আরও বলেন, “এটি বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আশার আলো জ্বালাবে।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, “ড. ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে বৈঠক থেকে অনেক বড় সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।” সেইসঙ্গে, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “এ বৈঠক দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সারা জাতি লন্ডনের দিকে তাকিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, এটি একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হবে, যা দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।” তিনি আরও বলেন, “দিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে—এটাই বিএনপির প্রত্যাশা। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।”
নেতারা মনে করছেন, এই বৈঠকে দুই নেতার প্রথম সাক্ষাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে, নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গ, এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এসব বিষয় সহজ করে তুলতে এবং সমস্যার সমাধান করতে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
নেতারা জানান, নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তুলে ধরা হবে, এবং বিএনপি ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নির্বাচন চায়। এ জন্য, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সেরা সময় বলে বিএনপি মনে করে। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, আর এ প্রসঙ্গে সরকার ঘোষিত এপ্রিলে নির্বাচনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও আলোচনা হবে।
সংস্কার ও পরিবর্তনের বিষয়েও বিএনপি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। দলটি ইতিমধ্যে সংশোধিত সংস্কার প্রক্রিয়ায় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। তবে, সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা নির্বাচিত সংসদই করবে—এই নীতিতেই অটুট বিএনপি। গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান স্পষ্ট, তারা মনে করে, বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করতে হবে এবং ড. ইউনূসকেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলবেন তারা।
সর্বশেষ, খালেদা জিয়া নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে বিরোধে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে এগোতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠককে কেন্দ্র করে দলীয় নেতারা আলোচনা ও সমঝোতার পথে এগোচ্ছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ, নির্বাচন, সংস্কার, এবং জাতীয় স্বার্থে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সময়ের মধ্যে বৈঠকটি দেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে—একটি স্থায়ী, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
১৩০ বার পড়া হয়েছে