সর্বশেষ

সারাদেশ

অনিশ্চয়তায় নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা, বকেয়া অনেক, লবণের দামেও চাপ

মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ
মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ

রবিবার, ১ জুন, ২০২৫ ৮:১৫ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ঈদ-উল আযহা ঘনিয়ে আসছে, আর সেইসাথে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা।

একদিকে লবণের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে ট্যানারি মালিকদের কাছে বছরের পর বছর বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় এবারের কুরবানি মৌসুমেও চামড়া কেনা নিয়ে পিছিয়ে রয়েছেন তারা।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, বিগত পাঁচ বছরে জেলার প্রায় ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ীর অন্তত ৭ কোটি টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে অনাদায়ী রয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও ট্যানারি মালিকরা সে দাম মানেন না। ফলে পুঁজিহীন হয়ে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন বা অন্য পেশায় চলে গেছেন।

নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় সংলগ্ন চামড়া পট্টি এক সময় সারা বছর কর্মচাঞ্চল্যপূর্ণ থাকলেও এখন সেখানে মাত্র ৩টি গুদাম চালু রয়েছে, যেখানে কাজ করেন মাত্র ৫ জন শ্রমিক। অথচ কুরবানির মৌসুমে এই এলাকায় প্রায় এক হাজার মৌসুমি শ্রমিক কাজ করতেন।

চামড়া ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন বলেন, “ট্যানারি মালিকদের কাছে আমার প্রায় ৭ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। বছরের পর বছর এই টাকা আটকে থাকলে আমাদের পক্ষে ধারদেনা করে চামড়া কেনা সম্ভব নয়। এর মধ্যে আবার লবণের দামও বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। আমরা বিপাকে আছি।”

সরকার এ বছর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৬০-৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে। খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয় না।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, “সারাবছর চামড়ার বাজার স্বাভাবিক থাকলেও কুরবানির সময় দাম কমে যায়, বলা হয় অনেক চামড়া নষ্ট থাকে। কিন্তু ট্যানারিরা সেই অজুহাতে দাম কমিয়ে দেয়। আমার একার ট্যানারি বকেয়া প্রায় ৫০ লাখ টাকা।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, চামড়া সংরক্ষণে এবার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হবে এবং তা জেলা শহরের ৬টি বড় মাদ্রাসায় সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদে চামড়া সংগ্রহের পয়েন্ট নির্ধারণ ও মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি জানান, বিনামূল্যে সরবরাহকৃত লবণ যথাযথভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা হবে।

গত বছর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, সরকারি নজরদারি না থাকলে এবারও সেই চামড়া বাজারে ন্যায্য দাম পাবে না এবং ব্যবসায়ীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো. মোমতাজ হোসেন বলেন, “দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি, কিন্তু বিনিময়ে নিজেদের অর্থ রক্ষা করতে পারছি না। সরকারের উচিত ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের পাওনা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তবেই চামড়া শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।”

১৪৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন