সর্বশেষ

জাতীয়

বাংলাদেশে পুশ ইন বন্ধ করতে ভারতের কাছে কূটনৈতিক চিঠি 

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫ ৩:২৬ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত থেকে বাংলাদেশে শতাধিক মানুষের পুশ ইন (বলপূর্বক ঠেলে পাঠানো) ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ৯ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, পুশ ইন প্রক্রিয়াটি বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার লঙ্ঘন এবং এটি বন্ধ না হলে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ৭ ও ৮ মে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রায় ২০২ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। বিজিবির তথ্যমতে, এর মধ্যে ৭৮ জনকে একটি ভারতীয় জাহাজে করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মান্দারবাড়িয়া চরে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এসব ব্যক্তির মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ বিভিন্ন সময় ভারতে পাড়ি জমানো বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিবি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ২০-২৫ বছর আগে বা ২-৩ বছর আগে কাজে গিয়েছিলেন ভারতে। অনেকে সেখানে আধার কার্ডসহ বিভিন্ন ভারতীয় ডকুমেন্টও পেয়েছিলেন। তবে বিএসএফ ও ভারতীয় পুলিশ তাদের এসব কাগজপত্র রেখে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।

বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, যারা আগে বাংলাদেশে এফডিএমএন (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) হিসেবে নিবন্ধিত ছিলেন এবং কোনোভাবে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আবার কিছু রোহিঙ্গা রয়েছে, যারা ভারতে UNHCR-এর অধীনে নিবন্ধিত ছিল।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। যে দেশে তারা শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত, সেখানে তাদের ফেরত রাখা উচিত ছিল। বাংলাদেশে এইভাবে ঠেলে পাঠানো যৌক্তিক নয়।”

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পতাকা বৈঠকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে বলে জানান তিনি। বিজিবি প্রধান জোর দিয়ে বলেন, “যদি কেউ প্রকৃত বাংলাদেশি হয়, বাংলাদেশ তাকে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। তবে তা হতে হবে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, এভাবে গোপনে নয়।”

প্রতিবাদপত্রে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করেছে, এই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের যৌথ সীমান্ত নির্দেশিকা, ২০১১ সালের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে সীমান্তে স্থিতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে এবং জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

পত্রে আরও বলা হয়েছে, ভারত যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠায়, তবে তা বাংলাদেশের পরিবর্তে তাদের আদি দেশ মিয়ানমারে পাঠানো উচিত। এ ধরনের একতরফা পদক্ষেপ বন্ধ না হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও সতর্ক করে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, খাগড়াছড়ি সীমান্তে এখনও ২০০ থেকে ৩০০ জন ব্যক্তি পুশ ইন করার জন্য জড়ো রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বিজিবির টহল জোরদার ও সতর্ক নজরদারির কারণে সাম্প্রতিক দিনে নতুন করে পুশ ইন করতে পারেনি বিএসএফ।

১০৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন