সর্বশেষ

অর্থনীতি

ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জারি হলো 'ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫'

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ১২ মে, ২০২৫ ৩:২০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
সরকার দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার আনতে ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে।

নতুন এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে কোনো অকার্যকর বা দেউলিয়াপ্রায় ব্যাংককে সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ, তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর কিংবা একীভূতকরণের মাধ্যমে পুনর্গঠনের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

প্রধান বৈশিষ্ট্য ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। প্রয়োজনে ব্রিজ ব্যাংক গঠন করেও তা পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ব্রিজ ব্যাংক হবে এমন একটি ব্যাংক, যার মাধ্যমে কোনো সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক পরবর্তীতে তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। এর মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নির্ধারিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে একটি ব্যাংকের সব ধরনের কার্যক্রম দুই দিন পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারবে। এরপর তিন মাস পর্যন্ত তা আংশিকভাবে সীমিত বা বন্ধ রাখা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যবস্থার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করতে হবে এবং আমানতকারীদের নির্দিষ্ট সীমায় টাকা উত্তোলনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকও থাকবে আওতায়
নতুন আইন ইসলামী ব্যাংকগুলোকেও আওতায় এনেছে। ব্যাংকের ব্যর্থতার পেছনে দায়ী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে দেওয়ানি বা ফৌজদারি আইনের আওতায় আনা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার স্তরের শ্রেণিবিন্যাস এবং PCA ফ্রেমওয়ার্ক
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘প্রম্পট করেকটিভ অ্যাকশন (PCA)’ ফ্রেমওয়ার্ক চালু করে। এর আলোকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুসারে ব্যাংকগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হবে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা ক্যাটাগরি-৪ এর ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত রেজল্যুশন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক অডিট ও সম্পদ যাচাই
অধ্যাদেশ জারির আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয়টি দুর্বল ব্যাংকের সম্পদের গুণগত যাচাই শুরু করেছে। এসআইবিএল, গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মূল্যায়ন করছে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং; অন্যদিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন এবং এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছে কেপিএমজি। যাচাইয়ের আওতায় রয়েছে ঋণ ব্যবস্থাপনা, বন্ধকি সম্পত্তি, বৈদেশিক মুদ্রার ঝুঁকি এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তথ্য।

বিশেষ তহবিল গঠন
দুর্বল ব্যাংকের পুনর্গঠন ও নিষ্পত্তি ব্যয় নির্বাহে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন তহবিল’ গঠন করা হবে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়-সম্পদের অংশ হবে না। এ তহবিলে সরকারের পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, আইডিবিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনুদান বা ঋণ দিতে পারবে। এছাড়া তপশিলি ব্যাংকগুলোর চাঁদা ও বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ও যুক্ত হবে।

ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সুশাসনের ওপর জোর
ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নতুন এই আইন জনগণের আস্থা ফেরাতে, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা বলছেন, আইনের কার্যকর প্রয়োগই হবে এর সফলতার মূল চাবিকাঠি।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “আইন ভালো হতেই পারে, কিন্তু বাস্তবায়নের জায়গায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। ব্যাংকিং খাতে যারা সুশাসন বজায় রেখেছে, তাদের যেন অযথা চাপের মুখে পড়তে না হয়।”

১২৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
অর্থনীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন