আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ, দেশে নার্স সংকট চরমে

সোমবার, ১২ মে, ২০২৫ ৩:১৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। অথচ দেশের স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ নার্সরা চরম সংকটে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ১৮ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য বর্তমানে প্রয়োজন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ জন নার্স। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে মাত্র ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৮২ শতাংশ কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসাসেবার মান নিম্ন থাকার অন্যতম কারণই হচ্ছে এই নার্স-সংকট। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের ৫ মে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত কাজের চাপে মানহীন সেবা
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও নিপসম-এর শিক্ষার্থী মল্লিকা বানু জানান, “আমার দায়িত্বে থাকা রোগীর সংখ্যা ছয়জন হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে ৫০ জনকে সামলাতে হয়।” এতে রোগীদের যথাযথ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না এবং নার্সদের মধ্যেও ক্লান্তি ও মানসিক চাপ বাড়ে—যা সেবার মানকেও প্রভাবিত করে।
চিকিৎসক-নার্স অনুপাতেও বিশৃঙ্খলা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতি চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স এবং পাঁচজন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত মাত্র ১:০.৭। দেশে বর্তমানে চিকিৎসকের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৭৫ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় ১৬.৫ শতাংশ কম। আর সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ২১৯ জন, যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ কম।
এক নার্স নেতা জানিয়েছেন, রিপোর্টে ব্যবহৃত পরিসংখ্যান কিছুটা পুরোনো হওয়ায় প্রকৃত চিত্র আরও ভিন্ন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার নার্স কাজ করছেন বলেও তিনি দাবি করেন। তবে এ সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
সমস্যার মূল: পেশার প্রতি সামাজিক অবজ্ঞা
২০২১ সালে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায়, নার্সিং পেশার প্রতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশে। অনেকেই এখনো এই পেশাকে ‘নিম্নমানের’ কাজ মনে করেন। নার্সদের বাড়ির বাইরে গিয়ে অন্য লিঙ্গের মানুষের শরীর স্পর্শ করা নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও এই পেশাকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
নার্সিং শিক্ষাও পিছিয়ে আছে। নার্সদের উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত উন্নয়ন নিয়ে সরকারি পর্যায়ে নেই যথাযথ স্বীকৃতি। এমনকি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেও নার্সদের পদোন্নতি বা বেতন বাড়ে না।
সরকারি পদক্ষেপের দাবি
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইসমত আরা পারভীন বলেন, “নার্সদের সংখ্যা ও বেতন বাড়ানো, এবং তাঁদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যুক্ত করা সরকারের দায়িত্ব। ক্লান্ত ও অবমূল্যায়িত নার্সের কাছ থেকে উন্নত সেবা আশা করা অবিচার।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন আনতে হলে নার্সদের গুরুত্ব দিতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। শুধু চিকিৎসক নয়, নার্স ও সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগেও প্রয়োজন অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ।
১২৩ বার পড়া হয়েছে