বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাহিত্য সম্মেলন: একটি অপূর্ব মিলনমেলা

বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ ৩:৫১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে যখন অশ্বারোহণের মতো সোনালী দিনগুলি অবদমিত হচ্ছিল, তখন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে জ্ঞানসঙ্গী সৃজন উৎসবে সারা দেশ থেকে হাজির হন কবি, লেখক, আবৃত্তিকার এবং গবেষকরা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কক্ষটি সেদিন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
এক একটি পদচারণা যেন সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করছিল। যেখানে কবিরা আবৃত্তি করছেন তাঁদের চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারে কবিতা; কেউ কেউ পাঠ করছেন নিজের সৃষ্ট কবিতার ব্যঞ্জনা। এর মাঝে কিছু আলোচনা, চিন্তাভাবনা, এবং বক্তব্য—সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এক নান্দনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ।
সভাপতি সাহেবের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ যেন এই অনুষ্ঠানকে আরো অর্থবহ করে তুলল। উপস্থিত সবাই, বিশেষ করে সেই সব গুণীজনদের প্রতি। যারা অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করতে আসেন। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক প্রকাশক জাহান বশির এবং লেখক-কবি-গবেষক বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন এক কথায় অসাধারণ। তাঁরা যেন নিপুণ হাতে ধারণ করেছিলেন সমগ্র আয়োজনটি।
এদিন সূরের মূর্ছনা এবং কবিতার আবৃত্তি মিলেমিশে এক অপরূপ দৃশ্যের রচনা করছিল। কবিরা তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করছেন, যেটি অবিস্মরণীয় এক অনুভূতি সৃষ্টি করছিল। মাঝে মাঝে আলোচনা দিকনির্দেশনা আর আবৃত্তি সাহিত্য প্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়েছে।
অনুষ্ঠানে আনন্দ, ভালোবাসা এবং প্যাশনের এক অপূর্ব মিলনমেলা সৃষ্টি হয়েছিল। সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষের সাথে আলাপচারিতায় আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে কাটানো সময় সত্যিই আমার সাহিত্যিক যাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে থাকবে।
কুষ্টিয়ার অসংখ্য গুণীজন আমাদের মাঝে ছিলেন সেদিন। রাজশাহী,ফরিদপুর, বগুড়া, নওগাঁ, সিলেট, দিনাজপুর আর ও অসংখ্য জেলার কবিরা হাজির ছিলেন তাঁদের শিল্পের মহিমা নিয়ে। নানা জেলা থেকে আগত লেখক, কবি ও সাংবাদিকরাও ছিলেন এই অনন্য সম্মেলনের অংশ। তাদের উপস্থিতি যেন সাহিত্যকর্মের বহুমাত্রিকতার পরিচয় তুলে ধরে। তাদের চিন্তা ও যুক্তিবাদ যেনো এক সেতুবন্ধন রচনা করছিল, যা দেশের সাহিত্যাঙ্গনকে এক নতুন দৃষ্টিকোণে দেখতে সাহায্য করছিল।
সুরে বাঁধা কবিতার সংগীত, কবি কণ্ঠে স্বরচিত কবিতার পাঠ, আলোচনা - সব কিছু মিলিয়ে এক অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কবি আড্ডা এই মহোৎসবের প্রাণভোমরা। তাদের নেতৃত্বে সবার মধ্যে যে বিশাল একটি সৃষ্টিশীল আলোচনার সেতুবন্ধন বয়ে চলেছে, তা সত্যিই হৃদয়গ্রাহী। এই সুন্দর মিলনমেলায় সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষের সঙ্গে আলাপ করে হৃদয়ে এক অভূতপূর্ব অনুরণন বয়ে গেছে। আসলে, সাহিত্য মানে শুধু লেখালেখি নয়, এটি মানুষের অন্তরের ভাষা। আজকের এই অনুষ্ঠান তারই নিখুঁত উদাহরণ।
এই আনন্দ, ভালোবাসা এবং শক্তিশালী সৃষ্টিশীলতার মেলায় আলাপচারিতায় কাটানো সময়গুলি অত্যন্ত মূল্যবান। সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষের সঙ্গে আন্তরিক আলাপ করে মনে হলো, আমাদের জীবনের এই পর্যায়টি শুধু একটি মিলনমেলা নয়, বরং সভ্যতার যোগাযোগের একটি চিত্র। আশা করি, এই বন্ধন বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল সৃষ্টির পথে এগিয়ে যাবে।
একদিকে কবি ও লেখক পরিচয়ে ক্রেষ্ট পেয়ে আমি নিজেকে যেন আকাশে উড়াতে লাগলাম। জীবনের প্রথম ক্রেষ্ট, যা আমার শ্রম ও অধ্যবসায়ের এক স্বীকৃতি। অনেকেই বলেন, "পুরস্কার নয়, তারা ভালোবাসা চান।" কিন্তু আমি মনে করি, পুরস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এটি আমাদের কাজের মর্যাদা ও স্বীকৃতির পরিচায়ক। পুরস্কার নতুন নতুন কাজের জন্য তুলে দেয় এক অনুপ্রেরণা।
অবশেষে, সাহিত্যিকদের সাথে আলাপচারিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময়, এবং তাদের সৃষ্টিগুলো সম্পর্কে জানার সুযোগ একটি অপূর্ব মিলনমেলার সৃষ্টি করেছে। এই মুহূর্তগুলো বলছে, সাহিত্যের কোন সীমানা নেই; কবিতা, গল্প, নাটক—সবকিছুর মাঝে একে অপরের পাশে হেঁটে চলা, একে অপরের সমর্থন করা—এটিই আমাদের লক্ষ্য।
এসকল অভিজ্ঞতার জন্য সবার প্রতি আমার অন্তর থেকে শুভ কামনা রইলো। আসুন, আমরা সবাই একসাথে সম্মিলিত হয়ে আরো অগ্রসর হই, সাহিত্যাঙ্গনে নতুন কিছু করতে, নতুন কিছু লিখতে এবং নতুন কিছু খুঁজে বের করতে। আমাদের সকল প্রচেষ্টা কেবলই আমাদের কবিতার, লেখার ও সৃষ্টির অগ্রগতিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আমরা যেন সকলে একটি সৃজনশীল ও মানবিক সমাজ গঠনে কাজ করে যেতে পারি।
লেখক পরিচিতি: কবি ও সব্যসাচী লেখক
২৯১ বার পড়া হয়েছে