আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় পশুহাটের পায়তারা, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা

বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ ২:২৬ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
আফতাবনগরবাসীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের মধ্যে আবারও পশুহাট বসানোর পরিকল্পনা শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ে কৌশল অবলম্বন করে অস্থায়ী পশুহাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এর ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার (২ মে) দুপুর ২টায় আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সিটি আড্ডার মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে আফতাবনগর সোসাইটি ও বসবাসকারীরা। জুমার নামাজের পর এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মুসল্লি, ফ্ল্যাট মালিক ও বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে পরিবেশ নষ্ট করে পশুহাট বসানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন। তারা সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আবাসিক এলাকায় পশুর হাট না বসানোর আহ্বান জানাবেন।
অফিসিয়ালি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে আফতাবনগরে পশুহাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই বিষয়ে কৌশলগতভাবে কিছুটা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে অস্থায়ী হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে সরাসরি আফতাবনগর নাম না উল্লেখ করে, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং এর ব্লক এম-৪, এম-৫, এন-০৪ (লেকের উত্তর পার্শ্বে আংশিক) ও সানভ্যালি (আংশিক) এর খালি জায়গায় হাটের জন্য ইজারা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
প্রতিবেশী এলাকাগুলোর মতোই, পশুহাটের কারণে এলাকার যানজট ও চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি, পশুর বর্জ্য, মলমূত্র ও দুর্গন্ধের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পশুহাট শেষে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকায় দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে যা বাসিন্দাদের জন্য অস্বস্তি ডেকে আনে।
গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আফতাবনগর এলাকায় পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দেয়নি হাইকোর্ট। ৩০ এপ্রিল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। এর আগে, ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী হাইকোর্টে রিট দায়ের করে এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। রিটে উল্লেখ করা হয়, এই এলাকায় গরু-ছাগলের হাটের কারণে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণের চলাচলে সমস্যা হয়, পাশাপাশি বৈদ্যুতিক লাইন ও বাতির ক্ষতি হয়।
অন্যদিকে, ৪ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ঈদুল আজহার জন্য কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ১১টি হাটের কথা উল্লেখ ছিল, যা পরে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ নয়জন বিবাদী করা হয়।
এখনও পর্যন্ত, এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে। তারা মনে করেন, পশুহাট বসানোর এই চক্রান্ত পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য অশান্তি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে। বাসিন্দাদের দাবী, আবাসিক এলাকার শান্তি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
আফতাবনগর এল ব্লক ও এইচ ব্লক মসজিদের সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী আলমগীর বলেন, আফতাবনগর রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত একটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল উচ্চবিত্তদের জন্য নির্মিত পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। এখানে প্রায় আট হাজার প্লট রয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেকের মতো প্লটে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে এবং ৩,০০০ এর বেশি প্লটে মানুষ বসবাস শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিটি সেক্টরে ভবন নির্মাণ হয়েছে এবং জনগণের বসতি রয়েছে। এই আবাসিক এলাকায় সমাজের উচ্চস্তরের সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিচারপতি, আইনজীবী, ডাক্তারসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বসবাস করে থাকেন। একই সাথে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মতো সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার ছাত্র সংখ্যা ২৫ হাজারের ওপরে। এছাড়াও ইম্পেরিয়াল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল, নোবেল কলেজসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চাশটির বেশি মাদরাসা রয়েছে। আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও এই এলাকায় বিদ্যমান। একই সাথে পিজিসিবি, ডেস্কো, পাসপোর্ট অফিসসহ বেশ কিছু সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আফতাবনগরে অবস্থিত। এছাড়াও এখানে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ও বের হবার জন্য শুধুমাত্র একটি পথ রয়েছে। সেই পথ দিয়েই প্রবেশ করতে হয় এবং বের হতে হয়। এর কারণে, যদি আফতাব নগরের যে কোনো ব্লকে বা সেক্টরে গরুর হাট অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ২০-৩০ হাজার গরুর ট্রাক প্রবেশের এবং বের হবার একমাত্র পথটি পুরোপুরি ব্লক হয়ে যায়। একবার গরুর হাট সংঘটিত হলে প্রায় ১৫ দিন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো কোনো পথ থাকে না। এরপর ঈদ শেষে প্রায় দুই মাস ধরে দুর্গন্ধ, ময়লা-আবর্জনা এবং সারা বছর মশার উৎপাত সহ্য করতে হয়। সিটি কর্পোরেশন আফতাবনগরে গরুর হাট ডেকেছে, কিন্তু আবাসিক এলাকাটি এখনও পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এটি ইস্টার্ন হাউজিং এর প্রাইভেট প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে আজ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন এক টাকারও কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। ঢাকা শহরে বড় আবাসিক এলাকার মধ্যে বসুন্ধরা রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি জায়গা এখনো খালি পড়ে রয়েছে, কিন্তু সেখানে কখনো গরুর হাটের সাহস সিটি কর্পোরেশন পায়নি। তবে, আফতাবনগরবাসীর এত ভোগান্তির পরেও প্রতিবছর এখানে গরুর হাট হয়। গত বছর হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণে এখানে গরুর হাট করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়টি উভয় সিটি কর্পোরেশনকে সোসাইটির মাধ্যমে লিখিতভাবে অবহিত করার পরেও গরুর হাটের নোটিশ দেওয়া দুঃখজনক। এই ব্যাপারে আমরা সকল মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দয়া করে, আফতাবনগরবাসীকে এই পরিবেশ বিপর্যয় থেকে মুক্ত করুন।
১৬৪ বার পড়া হয়েছে