এক বছরে বাংলাদেশ যেভাবে জ্বালানি বকেয়া প্রায় মিটিয়ে ফেলল

বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ৩:৫৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ সরকার এলএনজি আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাত্র আট মাস আগেও যেখানে বকেয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৬৬ মিলিয়ন ডলার, সেটি এখন নেমে এসেছে মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলারে।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কাতারএনার্জি এলএনজি, ওমান ট্রেডিং লিমিটেড (ওকিউটি), এবং বিভিন্ন স্পট মার্কেট সরবরাহকারীর কাছে মোট বকেয়া ছিল ৬৬৫.৭৬ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক সরবরাহকারী কাতারএনার্জি ও ওকিউটির ৩১৭.৪৮ মিলিয়ন ডলার এবং স্পট মার্কেটের ১১০.৭৩ মিলিয়ন ডলার বিল ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হয়।
এছাড়া, মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরনের কাছে থাকা ২৩৭.৫৫ মিলিয়ন ডলার বকেয়াও ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, আজ (৩০ এপ্রিল) বাকি থাকা ১০ মিলিয়ন ডলারও পরিশোধ করা হবে, যা পূর্ণ বকেয়া শোধের ইঙ্গিত দেয়।
পরিশোধে গতি কীভাবে এলো?
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “সরবরাহকারীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় আমরা বকেয়া পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।” তিনি জানান, বাজেট পুনর্বিন্যাস করে কিছু অনাবশ্যক প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে এবং অপচয় ও দুর্নীতির খাতগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “ব্যাংক খাতে সভরেইন গ্যারান্টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ডলার সংগ্রহ সহজ হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা জোগাড় করে বিল পরিশোধ করতে পেরেছে।”
সম্প্রতি পরিশোধের চিত্র:
২৯ এপ্রিল পেট্রোবাংলা মোট ৯৪.৫ মিলিয়ন ডলারের বিল পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে জেদ্দাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি)-এর মাধ্যমে চারটি স্পট মার্কেট সরবরাহকারী পেয়েছে ৬২.৫৪ মিলিয়ন ডলার এবং কাতারএনার্জি পেয়েছে ৩২ মিলিয়ন ডলার।
ভিটল এশিয়া পেয়েছে ২৮ মিলিয়ন ডলার, ওকিউটি ২২ মিলিয়ন, এক্সেলেরেট এলপি ৭.০৪ মিলিয়ন এবং গানভরসিঙ্গাপুর পেয়েছে ৫.৫ মিলিয়ন ডলার। আজ ওকিউটির কাছে থাকা বাকি ১০ মিলিয়ন ডলারও পরিশোধ করার কথা রয়েছে।
রিজার্ভ সংকটই ছিল মূল বাধা
বিগত কয়েক বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে বাংলাদেশ সময়মতো এলএনজি আমদানির বিল পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছিল। এর ফলে সরবরাহকারীরা মূল্য ও প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেয়, যা দেশের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে এখন রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলো ডলার জোগাড়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক খাত মোট ২৩.৯২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যার ৩.৪ বিলিয়ন এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম তিন মাসেই (আগস্ট-অক্টোবর ২০২৪) ব্যাংক খাত পেয়েছে ৭.০৩ বিলিয়ন ডলার, যার ২.০৬ বিলিয়ন এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে।
শেষ ধাপের অপেক্ষা
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, “আজ ওকিউটি-কে ১০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণ ঋণমুক্ত হয়ে যাব। এই সাফল্য সরকারের সমন্বিত নীতির ফল।”
১২৪ বার পড়া হয়েছে