সর্বশেষ

জাতীয়কনকনে শীত আরও তিন–চার দিন, দুর্ভোগ কাটছে না
সারাদেশগফরগাঁওয়ে রেললাইনের অংশ খুলে ফেলায় অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত
সিরাজগঞ্জ শহরে প্রকাশ্যে কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা, ৩ জন আটক
আন্তর্জাতিকসেনাসমর্থিত ইউএসডিপির একতরফা জয়ের আভাস, ভোটে বাধ্য করার অভিযোগ
খেলাঅনুশীলনের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢাকার সহকারী কোচ
জাতীয়

ইসকনে অর্থায়নকারী মিহির কান্তি, সাংবাদিককে হুমকি; থানায় জিডি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা

মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০২ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
ইসকনকে অর্থায়নকারী বির্তকিত ব্যক্তিত্ব মিহির কান্তি মজুমদারের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রবিরোধীমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যানুসন্ধান ইস্যুতে হুমকি পেয়ে রাজধানীর থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মুন্সী তরিকুল ইসলাম।

সম্প্রতি উগ্রবাদী ও আলোচিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনে অর্থায়ন নিয়ে কাজ শুরু করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে রীতিমত মিহির কান্তি মজুমদারের হুংকারে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় জিডি নথিভূক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। মোহাম্মদপুর থানার জিডি নং ৬৯২, তারিখ-০৮/১২/২০২৪। এরইমধ্যে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করেছেন মোহাম্মদপুর থানার উপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল হাসান খান।

সাংবাদিক মুন্সী তরিকুল ইসলাম জিডি'তে অভিযোগ করেন, তিনি একজন পেশাদার গণমাধ্যমকর্মী ও জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল 'এইমাত্র ডটকমে'র পরিকল্পনা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি উগ্রবাদী ও আলোচিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে অর্থায়নকারী বির্তকিত ব্যক্তিত্ব মিহির কান্তি মজুমদারের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রবিরোধিমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যানুসন্ধান শুরু করেন তিনি। আর এতেই বিপত্তি ঘটতে শুরু করে। এই মিহির কান্তি মজুমদার অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং পতিত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারী। সাবেক সচিব ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং উদ্দীপন এনজিও'র চেয়ারম্যান। বরগুনা সদর আসন থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এই আমলা। নৌকার মনোনয়নপত্রও তুলেছিলেন। কর্মজীবনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার নামও মিহির কান্তি মজুমদার। চাকরি জীবনে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে গেছেন সেই প্রতিষ্ঠানকেই ডুবিয়েছেন। লোপাট করে পথে বসিয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার বানিয়ে নামে-বেনামে বিপুল অর্থ তছরুপ করে বিপুল বিত্তের মালিক বনে গেছেন মিহির কান্তি। 

জিডিতে আরো বলা হয়, তাঁর (মিহির কান্তি মজুমদার) অনিয়ম দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় যাচাইকালে বক্তব্য গ্রহণে গত ২৯/১১/২০২৪ তারিখে +8801715-025597 মোবাইল নম্বরে কল করেন মুন্সী তরিকুল। তিনি রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পরে একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মিহির কান্তি মজুমদার তাকে ফিরতি কল দেন। কিন্তু কোন বক্তব্য না দিয়ে তার ধানমন্ডির ৫ নং রোডের ২০ নং বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করতে বলেন। এরপর থেকেই জনৈক ফজলে রাব্বি পলাশসহ বিভিন্ন অবান্তর গুন্ডা-মাস্তান ব্যক্তিবর্গ মুন্সী তরিকুলের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বিভিন্ন হুমকিধামকি আসতে থাকে। এরপর অধিকতর বক্তব্য গ্রহণের জন্য গত ০৭/১২/২০২৪ তারিখে তার নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলে হুংকার দিয়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। এমনকি তিনি ডিএমপি তথা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে বলেন, তাদেরকে দিয়ে মুন্সী তরিকুলকে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি এবং যেকোনো ক্ষতি করবেন। মিহির কান্তি মজুমদার চাকুরীচ্যুত পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের বড়ভাই। তার সহকর্মীদের দিয়েও জানমালের ক্ষতিসাধন করার হুমকি প্রদান করে মিহির কান্তি হোয়াটসঅ্যাপ কল কেটে দেন।

এ পরিস্থিতিতে, মিহির কান্তি মজুমদার সাংবাদিক মুন্সী তরিকুল ও তার সহকর্মী এবং পত্রিকার যেকোন কাজের ক্ষতিরও আশঙ্কা করছেন।

মিহির কান্তি মজুমদারের বিরুদ্ধে যতো অভযোগ:
সাবেক সচিব ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনুসারী। বরগুনা সদর আসন থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এই আমলা। নৌকার মনোনয়নপত্রও তুলেছিলেন। তবে টিকিট পাননি। কর্মজীবনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার নাম মিহির কান্তি মজুমদার। চাকরি জীবনে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে গেছেন সেই প্রতিষ্ঠানকেই ডুবিয়েছেন। লোপাট করে পথে বসিয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার বানিয়ে নামে-বেনামে বিপুল অর্থ তছরুপ করে বিপুল বিত্তের মালিক বনে গেছেন মিহির কান্তি। শুধু নিজে নয়, ধনী বানিয়েছেন স্ত্রী- সন্তান, ভাইবোনদেরও। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মিহির এখন টাকার বালিশে ঘুমান। কীভাবে তার এই উত্থান? কোন উপায়ে শতকোটি টাকার মালিক হলেন মিহির। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন।

দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত মিহির তালতলী উপজেলায় এক আতঙ্কের নাম। নিজের পদ ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে আয়ের টাকায় গড়েছেন বাংলো বাড়ি, একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট, মাছের ঘের, গরুর খামার, কুমিরের খামার, একরের পর একর জমি, হাউজিং কোম্পানি আরও কতো কি। শুধু বাংলাদেশে নয়, অঢেল সম্পদ কিনেছেন ভারতেও। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে মিহির কান্তির সম্পদ বেড়েছে স্রোতের বেগে। সরকারি চাকরি শেষে অবসরে গিয়েও তেলেসমাতি দেখিয়েছেন সাবেক এই সচিব। অল্প সময়ে তিনি একাধিক এনজিও’র শীর্ষ পদ দখল করে আলোচনায় আসেন। এনজিওতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে কৌশলে শতকোটি টাকা সরিয়ে নেন। নামে-বেনামে অপ্রয়োজনীয় নানা কাগুজে প্রকল্প সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এনজিওগুলোকে পথে বসিয়েছেন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ‘প্রোব বাংলাদেশ’ নামের একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ভারতে শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে মিহির কান্তি মজুমদারের বিরুদ্ধে। তবে কোনো কিছুই পাত্তা দেননি মিহির। পাত্তা দেননি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনকেও। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরেও মিহিরের প্রভাবের কাছে ধরাশায়ী হচ্ছে উদ্দীপন নামের একটি এনজিও। ওই এনজিও থেকে  বেআইনিভাবে নামসর্বস্ব প্রকল্প নিয়ে ৭ বছরে প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে পুরো এনজিওটি দখলের পাঁয়তারা করছে মিহির কান্তি।

মিহির কান্তি মজুমদার তার ছোট ভাই পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের ক্ষমতা ব্যবহার করে বরগুনার তালতলী উপজেলায় সাড়ে ৯ একর জমি দখলে নিয়ে মাছের ঘের করেছেন। এছাড়া ওই এলাকায় তাদের আরও প্রায় ২৯ একর জমি রয়েছে। ২০২৩ সালে এক বিধবা নারীর ২ একর জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ড. এমকে মজুমদার নামে স্কুল নির্মাণ করেছেন। এছাড়া প্রোব বাংলাদেশ নামে একটি মেডিকেয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয় দাশ নামের একজন ভারতীয় নাগরিককে ব্যবহার করে মিহির কান্তি ভারতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া কমিশনের বিনিময়ে পল্লী সঞ্চয়ের ১৭০০ কোটি টাকা মেঘনা ও রূপালী ব্যাংকে জমা রেখে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা সুবিধা নিয়েছেন মিহির কান্তি।

রাজধানীতে যত ফ্ল্যাট, প্লট: ঢাকা শহরের শান্তিনগর, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, সেগুনবাগিচা, ধানমণ্ডি, গুলশানে মিহির কান্তি ও তার স্ত্রী গীতা রানী মজুমদারের নামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এরমধ্যে শান্তিনগর ডিবিএল রোল কটেজে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে মিহির কান্তির। ফ্ল্যাট নং ৩-এ এবং ১-৭। মোহাম্মদপুরের আদাবরে একটি বাড়ি রয়েছে। একই এলাকার খিলজী রোডে ২২০০ স্কোয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে স্ত্রী গীতা রানীর নামে। মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটির বিল্ডিং নম্বর-২ তে মিহির কান্তির আরও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া বছিলায় দু’টি ৫ কাঠার প্লট রয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া পিরোজপুরের চালিতাখালিতে ২০ বিঘা জমিতে মিহির একটি বাংলো বাড়ি করেছেন। বাড়িটি উদ্দীপনের মৎস্য প্রজেক্টের পাশেই। বরগুনা উপজেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় মিহির কান্তির দু’টি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। পৈতৃক নিবাস পিরোজপুরে হলেও মিহির কান্তি বরগুনার তালতলী উপজেলাকে গ্রামের বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেন।  সেখানেই তিনি বসবাস করেন। ওই আসন থেকেই তিনি নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন।

এনজিও থেকে ২৩০ কোটি টাকা সরান মিহির: অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালে উদ্দীপন নামের একটি এনজিওতে যোগদানের পর থেকেই এনজিওটির কার্যপ্রণালী ও মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির অনুমতির বাইরে গিয়ে নামে-বেনামে শত শত প্রকল্প হাতে নেন মিহির কান্তি মজুমদার। উদ্দেশ্য ছিল কৌশলে টাকা সরিয়ে নেয়া। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন এনজিওটির সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ হোসেন তালুকদার। মিহির কান্তির অনিয়মে এনজিওর কর্মকর্তারা বাধা দিলে কয়েক জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অল্প দিনেই নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মিহির কান্তি মজুমদারের বিরুদ্ধে। নামসর্বস্ব প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্দীপন এনার্জি (ইউইএল) ও উদ্দীপন রিনিউয়াল এনার্জি (ইউআরইএল), সোলার ইরিগেশন, রংপুর গোল্ড ব্রিকস ইটভাটা ক্রয়, ভাকুর্তা-১ ও ২ প্রকল্প, যশোর নার্সারি, ভালুকায় রেপটাইলস কুমিরের খামার ক্রয়, চালিতাখালী কৃষি প্রকল্প, এ অ্যান্ড পি ব্যাটারি কোম্পানি, সীডস বল প্রজেক্ট, সিমুলেশন টেক ল্যাব, ভাকুর্তা মিল্ক প্রসেসিং, উদ্দীপন এগ্রো লিমিটেড, উদ্দীপন টিভি, উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ, কৃষি পাঠশালা, প্রাণিসম্পদ ব্যাংক, পাখি পল্লী সৃজন, কল সেন্টার, নারী ফার্মেসি, ভাসমান কৃষি, আমাদের গ্রাম ক্যান্সার হাসপাতাল, পল্লী এম্বুলেন্স, কচুরিপানা প্রজেক্ট, মেঘনা ব্যাংকে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ, রূপগঞ্জ প্রজেক্ট, বিউটি পার্লার, কল সেন্টার, ক্রিম অ্যান্ড ক্রিস্ট সুইটস, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ইউআরইল প্রজেক্ট হাসপাতাল, হিসাব অ্যাপ, গ্রাম বাংলা সিস্টেম, স্বাস্থ্য আপা, হেলথ বক্স, স্বাস্থ্য কার্ড, প্রোব বাংলাদেশ, যানবাহন ও ক্লাউড ডাটাবেজ। এসব প্রকল্পের আড়ালে মিহির কান্তি মজুমদার প্রায় ৪০৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। যার মধ্যে ২৩০ কোটি টাকাই বিভিন্ন অনিয়ম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এমনকি মাইক্রোক্রেডিট অথরিটিও তাদের অনুসন্ধানে এসব অনিয়মের তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন দিয়েছে। এ ছাড়া পিকেএসএফ ও মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির অডিট রিপোর্ট ও অর্থ আত্মসাতের সমস্ত দলিলাদি সংরক্ষিত আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্দীপনের এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তি এমন কিছু প্রকল্প নিয়েছেন যা উদ্দীপনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এম আর এ বারবার সতর্ক করার পরেও তিনি কিছু বেআইনি প্রকল্প নিয়েছেন। তিনি কারও কথা শোনেননি। তিনি প্রতিটি প্রকল্পে ৫ টাকা খরচ হলে ১০ টাকা তুলে নিয়েছেন। যার কোনো হিসাব উদ্দীপনকে আজও দেননি। যেমন ভাকুর্তা-১ ও ভাকুর্তা-২, রূপগঞ্জ প্রকল্পে জমি ক্রয়ে সর্বোচ্চ ৪ কোটি টাকা লাগার কথা। কিন্তু তিনি ৯ কোটি টাকা দেখিয়েছেন। ভাকুর্তায় জমি ক্রয় ও মিল্ক প্রসেসিং এবং গেস্ট হাউস নির্মাণে ৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়। রূপগঞ্জ প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি বিল্ডিং ডেকোরেশন করা হয়। কচুরিপানা কাটার জন্য অতিরিক্ত দামে মেশিন ক্রয় করা হয়। ৯ কোটি টাকা খরচ করে রংপুরের মিঠাপুকুরে গোল্ড ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা ক্রয় করা হয়। এই ইটভাটা ২ কোটির বেশি হবে না। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রতিবেদনও দিয়েছে। এ ছাড়া ভালুকায় কুমিরের খামারের নিলাম মূল্য উঠেছিল ২৩ কোটি তিনি ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। কারণ মিহির কান্তির সঙ্গে পিকে হালদারের বন্ধুত্ব ছিল। তার মাধ্যমে আঁতাত করেই চড়া দামে এই খামার কেনা হয়েছে। চালিতাখালী কৃষি প্রকল্পে স্থানীয় বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে ৩ কোটি ৫ লাখ টাকায় জমি কেনা হয়। ওই জমির দাম ১ কোটি টাকাও হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্দীপনের একজন জোনাল ম্যানেজার বলেন, হেলথ বক্স, স্বাস্থ্য কার্ড, প্রোব বাংলাদেশ, জোন পর্যায়ে ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়। এ ছাড়া এনজিওর জন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে হিসাব নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ১৮ মাসে ১৫ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়। অথচ এই অ্যাপ উদ্দীপনের এক পয়সারও কাজে আসেনি। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। এই অনিয়ম নিয়ে এমআরএ তদন্ত করে মিহির কান্তির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে। সে এর কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেনি। চেয়ারম্যানের পদ গেলেও তিনি আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। ফিরে আসলে আর উদ্দীপন থাকবে না। ২০১৭ সাল থেকে ’২৩ সাল পর্যন্ত তিনি শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন। উদ্দীপনের কেউ কিছু বলার সাহস পাননি। 

প্রোব বাংলাদেশের মাধ্যমে টাকা পাচার: মিহির কান্তি মজুমদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে হেলথ কমসূচি পার্টনার ভারতীয় কোম্পানি প্রোবের সঙ্গে একটি অসম চুক্তি করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক বিজয় দাসের মাধ্যমে ভারতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।  প্রোবের হেলথ প্যাকেজে উদ্দীপনের পুরো টাকায় লস হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ড সদস্যরা।  এ ছাড়া এই বিজয় কুমারকে উদ্দীপনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেড় বছর ধরে বিনা ভাড়ায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে মিহির কান্তি ও প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু। তবে উদ্দীপনের পক্ষ থেকে একাধিকবার নোটিশ দিয়েও বিজয় কুমারকে কার্যালয় থেকে সরানো যায়নি।  

এমআরএ তদন্তে যা বেরিয়ে আসে: এদিকে মিহির কান্তি মজুমদারের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ তছরুপের কারণে ডুবতে বসা উদ্দীপনকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। তাদের প্রাথমিক তদন্তেও বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের তথ্য উঠে আসে। পরে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণসহ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ও পরিচালনা পর্ষদের সভায় অথরিটির পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে ১ বছরের জন্য পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। 

যেভাবে ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেন: ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে প্রায় ১৪৯ জনকে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকি তারা তড়িঘড়ি করে তাদেরকে বিভিন্ন উপজেলায় পদায়ন দেয়া হয়। এ ছাড়া পুরনো কর্মীদের বাদ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যাংকটিতে ৪৮৫ জন ক্যাশ সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগে প্রক্রিয়ার ব্যাপক ঘুষ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান  উদ্দীপনের দেয়া তথ্য বলছে, উদ্দীপনের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১১৪ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৩৭ কোটি, জুন ২০২৩ বছরে ১০৪ কোটি টাকা। এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২৩ কোটি টাকাসহ মোট ৩৭৮ কোটি টাকা রিশিডিউল করা হয়। এদিকে রিশিডিউল করে সংস্থায় ভুয়া লাভ দেখানোয় এনজিওটির মারাত্মক অর্থ ঝুঁকি ও সংকটে পড়ে। উদ্দীপনের দেয়া তথ্য বলছে, এনজিওটির নিয়োগ প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেছেন মিহির কান্তি মজুমদার। নিজের পছন্দমতো কর্মী নিয়োগ ও পরিচিত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দেনননি এমন অভিযোগও রয়েছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্দীপন ব্যাপক আর্থিক সংকটে ভুগছে। 

স্বাস্থ্য কার্ড মিহিরের টাকা লোপাটের ট্রাম্পকার্ড: ২০২০ সালে বড় অশুভ পরিকল্পনা করেন মিহির কান্তি। ঋণ বিতরণের সময় উদ্দীপনের সারা দেশের লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে স্বাস্থ্যকার্ড বাবদ ১ হাজার ২০০ টাকা কেটে নেয়া হয়। এমআরটির নিয়মের বাইরে গিয়ে জোরপূর্বক এই প্রকল্প চালু করেন মিহির কান্তি। পরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ বছরে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আদায় করে কৌশলে তা সরিয়ে নেয়া হয়। 

(উগ্রবাদী ও আলোচিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে অর্থায়নকারী বির্তকিত ব্যক্তিত্ব মিহির কান্তি মজুমদারের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রবিরোধীমূলক কর্মকাণ্ডের আরো তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন আসছে শিগগিরই…)

১৬২৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন