সর্বশেষ

জাতীয়বিদায় খালেদা জিয়া: সব চেষ্টা ব্যর্থ, চলে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
সারাদেশবগুড়ার দুই আসনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মির্জা ফখরুল
কুমারখালীতে দ্রুতগতির ড্রাম ট্রাকের চাপায় কলেজ শিক্ষার্থীর পা বিচ্ছিন্ন
আন্তর্জাতিকসেনাসমর্থিত ইউএসডিপির একতরফা জয়ের আভাস, ভোটে বাধ্য করার অভিযোগ
খেলাঅনুশীলনের সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঢাকার সহকারী কোচ
ফিচার

গণতন্ত্র, শিক্ষা ও শিল্পায়নে খালেদা জিয়ার অবদান: একটি ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২:৩৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার দুই দফা শাসনকাল (১৯৯১–১৯৯৬ এবং ২০০১–২০০৬) আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ও কাঠামোগত সংস্কারের যুগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সময়ে তার নেতৃত্বে শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সংস্কার, অবকাঠামো নির্মাণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান—সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে।

সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন
১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর তার সরকারের অন্যতম ঐতিহাসিক উদ্যোগ ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসা। দ্বাদশ সংশোধনী পাসের মধ্য দিয়ে দেশ পুনরায় সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আত্মপ্রকাশ করে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত।

শিক্ষা খাতে ব্যাপক সংস্কার
খালেদা জিয়ার সরকার শিক্ষা খাতকে জাতীয় গুরুত্বে পরিণত করে। বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রবর্তনের পাশাপাশি ছাত্রীদের দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি কর্মসূচি চালু করা হয়। “শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য” প্রকল্প দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশুদের স্কুলমুখী করে তোলে। প্রথমবারের মতো শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দও আসে এই সময়ে।
নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক সুরক্ষা
নারীর অধিকার ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে সরকার গঠনমূলক নীতি গ্রহণ করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালী করা, সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ নারী কোটা চালু এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন তারই প্রতিফলন। ৯০–এর দশকে নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানে এই পদক্ষেপগুলো বাস্তব পরিবর্তন আনে।

অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও শিল্পায়ন
তার আমলেই ১৯৯১ সালে দেশে আধুনিক করব্যবস্থার অংশ হিসেবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু হয়। গার্মেন্টস খাতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি চালুর মাধ্যমে রপ্তানি শিল্প দ্রুত প্রসার লাভ করে। পাশাপাশি, ১৯৯৩ সালে বেসরকারীকরণ বোর্ড গঠন করে শিল্প খাতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।

অবকাঠামো ও পরিবেশ উন্নয়ন
বড় আকারের অবকাঠামো উন্নয়নের সূচনা ঘটে তার নেতৃত্বেই। যমুনা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ ১৯৯৪ সালে শুরু হয়; একই সাথে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণ প্রকল্পও বাস্তবায়িত হয়। গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক বিস্তারের ফলে কৃষি ও পণ্য পরিবহনে নতুন গতি আসে। পরিবেশ রক্ষায় ১৯৯২ সালে জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণয়ন ছিল তার সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)–এর কার্যক্রম সক্রিয়করণে বেগম খালেদা জিয়া তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।

প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক সংস্কার
২০০১–২০০৬ মেয়াদে সরকার টেলিকম খাত বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে, যার ফলে দেশে মোবাইল যোগাযোগে বিপ্লব ঘটে। একই সঙ্গে সরকারি চাকরির প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে ৩০ বছর নির্ধারণ করে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ানো হয়।


দেশের আধুনিক অর্থনৈতিক কাঠামো, নারী শিক্ষার প্রসার, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান—তার অনেকটাই এই সময়ের সংস্কার ও উদ্যোগের ভিত্তিতে গঠিত বলে বিশ্লেষকদের মত।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক

১২৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফিচার নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন