কনকনে শীতে বিপর্যস্ত কুড়িগ্রাম
এখনও শুরু হয়নি পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ
শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৯:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নদ-নদীবেষ্টিত, সীমান্তঘেঁষা ও হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলা কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আর হিমেল বাতাসে যবুথবু হয়ে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী। শীতের তীব্রতায় এখনো পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ না হওয়ায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
এ বছর শীতের প্রকোপ শুরু থেকেই ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। রাতভর বৃষ্টির মতো ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ছে কুয়াশা। বিকাল থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারদিক। সঙ্গে উত্তরীয় হিমেল বাতাসের কারণে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনের বেলায়ও অনেক দেরিতে সূর্যের দেখা মিলছে। ফলে কাজে যেতে পারছেন না শ্রমজীবীরা।
গত তিন দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। আজ (সোমবার) সকাল ৬টায় রাজারহাট উপজেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতভাগ।
শীত ও কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের শহিদ মিয়া বলেন, “কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না। কিন্তু এই শীতে কাজ করলে হাত-পা জ্বালা করে, শরীর কাঁপে।”
ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের বাসিন্দা খোকন মিয়া জানান, “আমরা গরিব মানুষ, কম্বল কেনার সামর্থ্য নাই। এখন পর্যন্ত কোনো মেম্বার বা চেয়ারম্যান কেউ কম্বল দেয় নাই।”
এদিকে শীতের প্রভাবে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, “অতিরিক্ত শীতে আমার ছোট বাচ্চাটা কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছে।”
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, শীতের কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। কেউ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আবার অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, “চলতি শীতে জেলার ৯টি উপজেলায় অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে প্রথম পর্যায়ে ২২ হাজার কম্বল এবং নগদ ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
তবে স্থানীয়দের দাবি, তীব্র শীতের তুলনায় সহায়তা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দ্রুত ও সুষমভাবে কম্বল বিতরণ না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
১০৫ বার পড়া হয়েছে