সর্বশেষ

জাতীয়ঢাকায় আবারও ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশাল
প্লট দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছর, জয়ের ৫ বছর এবং পুতুলের ৫ বছর কারাদণ্ড
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৫৬৭
সৌদি আরবসহ সাত দেশে প্রবাসীদের ভোট নিবন্ধন সাময়িক স্থগিত
দুদকের সব কর্মকর্তার সম্পদের বিবরণ বাধ্যতামূলক: প্রেস সচিব
দেশজুড়ে ১৩৬ পুলিশ পরিদর্শকের বদলি
হাসপাতালের সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া
রাজধানীর মগবাজারে বহুতল ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সারাদেশঈশ্বরদীতে বিএনপি-জামায়াত দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
ঝিনাইদহে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে ১০ জন আহত, বাড়িঘর ভাংচুর
চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ নিহত ২
আন্তর্জাতিকহংকংয়ে আবাসিক কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫
পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারার ১৪ বছরের কারাদণ্ড
চীনে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ রেলশ্রমিকের মৃত্যু
মিয়ানমারে ৩ হাজার রাজবন্দি মুক্তি, ৫৫০০ জনের অভিযোগ প্রত্যাহার
হোয়াইট হাউসের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি
খেলাআইরিশদের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়, চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বড় হার
বিপিএল শুরু ১৯ ডিসেম্বর, ফাইনাল ১৬ জানুয়ারি
মতামত

পূর্বাচল প্লট দুর্নীতি: শেখ হাসিনা রায়ের রাজনৈতিক ও আইনি বার্তা কী

 মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বৃহস্পতিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ৩:৫০ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ–দুর্নীতির তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২১ বছর এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ৫ বছর করে কারাদণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং ভবিষ্যৎ দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের জন্য বহুমাত্রিক বার্তা বহন করে।

এই রায়ে আদালত শুধু তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দণ্ডিত করেনি; দেখিয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদকে পারিবারিক সুবিধায় রূপান্তর করার যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি, সেটিই আসলে এই মামলার মূল আসামি।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও ‘লোভাতুর দৃষ্টি’
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনা পূর্বাচল প্রকল্পে নিয়ম মেনে প্লট বরাদ্দের জন্য কোনো আবেদন না করলেও, প্লট বুঝে নিতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছেন—একে বিচারক জনগণের সম্পদের প্রতি “লোভাতুর দৃষ্টি” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এ মন্তব্য শুধু ব্যক্তি শেখ হাসিনার চরিত্র মূল্যায়ন নয়; এটি এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমালোচনা, যেখানে বারবার ক্ষমতায় থাকা নেতারা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজের এবং পরিবারের “প্রাপ্য” মনে করেন।


ক্ষমতার অপব্যবহার ও ‘লোভাতুর দৃষ্টি’
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনা পূর্বাচল প্রকল্পে নিয়ম মেনে প্লট বরাদ্দের জন্য কোনো আবেদন না করলেও, প্লট বুঝে নিতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছেন—একে বিচারক জনগণের সম্পদের প্রতি “লোভাতুর দৃষ্টি” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এ মন্তব্য শুধু ব্যক্তি শেখ হাসিনার চরিত্র মূল্যায়ন নয়; এটি এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমালোচনা, যেখানে বারবার ক্ষমতায় থাকা নেতারা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজের এবং পরিবারের “প্রাপ্য” মনে করেন।

আমলাতন্ত্রের ভূমিকা: কেবল ‘রাজনৈতিক নির্দেশ’ নয়
রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শুধু রাজনৈতিক নির্দেশ নয়, গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব, অতিরিক্ত সচিব থেকে শুরু করে রাজউকের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম ভেঙেছেন। মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ সুপারিশ’ এবং রাজউকের বোর্ড সভায় কোনো আবেদন ছাড়াই ফাইল অনুমোদনের বিষয়টি আদালত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে, এমনকি ভবিষ্যতে এ ধরনের সুপারিশভিত্তিক প্লট বরাদ্দ ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার পরামর্শও দিয়েছে।
এর মানে এই রায় কেবল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধেও এক ধরনের সতর্কবার্তা। আমলারা দীর্ঘদিন ধরে “উপরের নির্দেশে করেছি” যুক্তি দিয়ে দায় এড়িয়ে গেছেন; এই রায়ে বোঝানো হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে কর্মকর্তা নিজেও দায়ী, বিশেষ করে বোর্ড সভায় নিয়ম ভাঙার বিষয়ে সম্মতি দিলে।

আইনি দৃষ্টান্ত ও ভবিষ্যৎ দুর্নীতিবিরোধী লড়াই
বাংলাদেশে পূর্বেও উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন রাজনীতিক দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, কিন্তু পরিবার–কেন্দ্রিক প্লট বরাদ্দ নিয়ে এত বিস্তৃতভাবে আদালতের পর্যবেক্ষণ খুব বেশি দেখা যায়নি। এই রায়ে যে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তৈরি হলো:
রাষ্ট্রীয় প্লট বরাদ্দ এখন থেকে কেবল “রাজনৈতিক কোটার সুবিধা” হিসেবে চালানো কঠিন হবে; যে কোনো বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতে নজির হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
দুদকের জন্য এটি একটি টেস্ট কেস—তারা প্রমাণ করতে পেরেছে, কাগজে–কলমে থাকা ফর্মালিটি (হলফনামা, সুপারিশপত্র, বোর্ড–মিনিট) পেরিয়েও অনিয়ম শনাক্ত করা সম্ভব।
তবে বাস্তবতা হলো, উচ্চ আদালতে আপিলের পর এই সাজা বহাল থাকে কি না, তার ওপর নির্ভর করবে এই রায়ের বাস্তব প্রভাব কতটা গভীরে যাবে। যদি বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়া রায় টিকে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পরিবারের বিরুদ্ধে প্লট বা ফ্ল্যাট–দুর্নীতির মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এটি আইনি ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে।

রাজনৈতিক প্রভাব: সহানুভূতি, মেরুকরণ নাকি সংস্কারের চাপ?
রাজনৈতিক মাঠে এই রায়ের অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব দেখা যাচ্ছে:
ক্ষমতাচ্যুত ও বিদেশে অবস্থানরত শেখ হাসিনার জন্য এটি একদিকে আইনি ঝুঁকি বাড়ালেও, সমর্থকগোষ্ঠীর কাছে “শিকার” ইমেজকে আরও জোরালো করতে পারে, যা ভবিষ্যৎ নির্বাচন বা সমর্থন সংগঠনে কাজে লাগানো হতে পারে।
বিরোধী শক্তি এই রায়কে ব্যবহার করবে পূর্বের ‘লুটপাট–কেন্দ্রিক শাসন’ প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে; বিশেষ করে “গরিব সাজিয়ে প্লট নেওয়া”–ধরনের ভাষা প্রচারে সহজেই জায়গা পাবে।
নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবী মহলের একাংশ ইতিমধ্যে সরকারি প্লট বরাদ্দব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কারের দাবি তুলেছে; এটি যদি সংগঠিত দাবিতে রূপ নেয়, তাহলে ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর ওপর আইন ও নীতিমালা বদলের চাপ তৈরি হবে।

সাধারণ নাগরিকের দৃষ্টিতে: ‘স্বপ্নের নগরী’ বনাম ‘নেতাদের নগরী’
পূর্বাচল প্রকল্পকে বছরের পর বছর “স্বপ্নের নগরী” বলা হলেও, আজকের দৃশ্য বাস্তবে অনেকের কাছে “নেতাদের নগরী”–র প্রতীক। এই মামলার নথিতে উঠে এসেছে, যেখানে একদিকে খেটে খাওয়া মানুষ বছরের পর বছর লটারি, কিস্তি আর ফরম পূরণের বোঝা টানছে, সেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকা কয়েকজন ‘গরিব’ পরিচয় দেখিয়ে বা বিশেষ কোটায় একাধিক প্লট পেয়েছেন।
এই বৈষম্যই সাধারণ নাগরিকের ক্ষোভকে জাগিয়ে রাখে, এবং সেই ক্ষোভকে আইনি ভাষায় অনুবাদ করাই ছিল এই মামলাগুলোর মূল তাৎপর্য। আদালতের পর্যবেক্ষণে যখন বলা হয়, “উনি না পেলে এই প্লট কোনো খেটে খাওয়া মানুষ পেত,” তখন তা আইনি যুক্তির পাশাপাশি একটি নৈতিক অবস্থানও তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে জন–আদালতের বিচারকেও প্রভাবিত করবে।

সামনে কী দেখা যেতে পারে
আগামী ধাপ হলো আপিল বিভাগে আইনি লড়াই, বাকি তিন মামলার বিচার এবং রাজনৈতিক প্রচারণায় এই রায়ের ব্যবহার–বিপর্যয়। একদিকে দুর্নীতিবিরোধী শক্তি এই রায়কে “সিস্টেমিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথম ধাপ” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে; অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন বা ভবিষ্যৎ ক্ষমতাকামী দলগুলো এই ধরনের মামলার ঝুঁকি মাথায় রেখে প্লট–ফ্ল্যাট–বরাদ্দ নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে বাধ্য হতে পারে।
সবশেষে, এই রায় দেখিয়েছে—রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদে পরিণত করার সংস্কৃতি যত গভীরই হোক, আইনের কোর্টে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তবে সেই প্রশ্ন কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে কত দূর যায়—তা নির্ভর করবে উচ্চ আদালতের রায়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নাগরিক সমাজের চাপ—এই তিনের সমন্বয়ের ওপর।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

১২১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন