সর্বশেষ

জাতীয়ভারতে পাঠানো বাংলাদেশের চিঠি পর্যালোচনায় নয়াদিল্লি
নির্বাচন ও গণভোট একসাথে : অধ্যাদেশ জারি, জানানো হলো আটটি মূল তথ্য
দেশের ৬৪ জেলায় নতুন পুলিশ সুপার নিয়োগ, প্রজ্ঞাপন জারি
লটারি ভিত্তিক এসপি নিয়োগে মেধাবীদের কেউ বাদ পড়েনি: উপদেষ্টা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোট প্রতিহত করলে ব্যবস্থা নেবে ইসি
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এখন ঢাকা, শীর্ষে জাকার্তা : জাতিসংঘ
কৃষকের স্বার্থে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত : উপদেষ্টা
বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আবারও যমুনামুখী মিছিল
উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারের জন্য সতর্কতা
খেলাপি ঋণ এখন ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা
বিএমইউ হাসপাতালে আগুন, ১৮ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে
সারাদেশবাগেরহাটে কিশোরীর আত্মহত্যা, পুলিশ ময়নাতদন্তের অপেক্ষায়
বাউল শিল্পীদের ওপর হামলা: অজ্ঞাত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা
পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১২ ডিগ্রিতে
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদীতে ড্রেজার, লাখ টাকা জরিমানা
ফেসবুকে কাবা শরিফ নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট: নগরকান্দায় যুবক আটক
আন্তর্জাতিকপাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের ১০ জন নিহত
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৪
ইথিওপিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের ছাইয়ের মেঘ ভারতে, বহু ফ্লাইট বাতিল
খেলাবাফুফে’র টাইটেল স্পন্সর ঘিরে নতুন বিতর্ক: কোনো চুক্তি হয়নি, দাবি পেট্রোনাসের
মেসির জাদুতে ইন্টার মায়ামি ফাইনালে, সিনসিনাটিকে ৪-০ গোলে হারালো
ফিচার

পাকিস্তানের সাফল্যের পেছনে জে-১০সি নয়, যুদ্ধ পরিচালনা: বিতর্কের কেন্দ্রে ফরাসি কমান্ডার

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ৬:১০ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সম্মেলনকে ঘিরে নতুন করে তর্ক-বিতর্ক তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মে ২০২৫ আকাশযুদ্ধের ফলাফল নিয়ে।

পাকিস্তানি গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ফ্রান্সের ল্যান্ডিভিজিও নৌ বিমানঘাঁটির কমান্ডার ও প্রবীণ রাফাল পাইলট ক্যাপ্টেন জ্যাক (বা ইভান) লনে সম্মেলনে বলেছেন—৬–৭ মে আকাশযুদ্ধে পাকিস্তানের সাফল্যের মূল কারণ ছিল তাদের অপারেশনাল দক্ষতা ও যুদ্ধ পরিচালনা; চীনা তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেবল একটি প্ল্যাটফর্ম, আসল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে পাইলট ও কমান্ড টিমের উৎকৃষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ।


জিও নিউজ, সামা, দুনিয়া নিউজসহ পাকিস্তানের কয়েকটি টেলিভিশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ২১–২২ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিখেছে, ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওই ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিরক্ষা সম্মেলনে ৩২টি দেশের ৫৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, আর সেখানেই ক্যাপ্টেন লনে মে মাসের আকাশযুদ্ধের অন্যতম বিস্তারিত বিদেশি সামরিক মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন। তাদের দাবি, রাতভর চলা সংঘর্ষে আকাশে ছিল ১৪০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান; বিপুল সংখ্যক টার্গেটের ভিড়ে যে কারও গুলি খাওয়া সহজ হলেও পাকিস্তান ভারতীয় বাহিনীর তুলনায় জটিল পরিস্থিতি অনেক ভালোভাবে সামলেছে বলে লনে মন্তব্য করেছেন।

এইসব প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কথিত ব্রিফিংয়ে লনে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমানের রাডার ব্যবস্থাকে ঘিরে ‘ব্যর্থতা’র গুঞ্জন প্রসঙ্গে জানান—যুদ্ধযন্ত্রে বড় কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল না, বরং সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি; অর্থাৎ সমস্যা ছিল মেশিনে নয়, যেভাবে তা চালানো হয়েছে সেখানে। পাকিস্তানপন্থী প্ল্যাটফর্মগুলো এই উদ্ধৃতি সামনে এনে প্রচার করছে যে, রাফাল প্ল্যাটফর্ম আসলে জে-১০সি থেকে পিছিয়ে নয়, কিন্তু ভারতীয় পাইলট ও কমান্ড কাঠামোর অপারেশনাল দুর্বলতার কারণে তারা আকাশযুদ্ধে ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তবে ভারতের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই দাবি করা হচ্ছে, রাফাল ভূপাতিত হওয়ার সব খবরই চীন-প্রণোদিত প্রোপাগান্ডা, যা মে মাসের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই-নির্ভর ছবি, ভুয়া ভিডিও ও সাজানো বয়ান দিয়ে ছড়ানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু সাম্প্রতিক মূল্যায়নেও উঠে এসেছে, চীন সংঘর্ষকে ব্যবহার করেছে ফরাসি রাফালের ভাবমূর্তি খাটো করে নিজস্ব যুদ্ধবিমান বিক্রির বাজার তৈরির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত বিভ্রান্তিমূলক অভিযান চালাতে।

ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, জেনারেল অনিল চৌহান, ২০২৫ সালের ৩১ মে নিউ দিল্লিতে এক সরকারি ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেন—মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের কিছু যুদ্ধবিমান গিয়েছিল। তিনি পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “We have indeed lost several fighter jets in the recent conflict,”—যদিও তিনি ঠিক কোন মডেলের বিমান ভূপাতিত হয়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য দেননি। তার এই বিবৃতি CNN ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়, যা ভারতীয় পক্ষের পক্ষ থেকে বিমান ক্ষতির প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।

 

ভারত স্বীকার করেছে যে মে ২০২৫-এর যুদ্ধে তাদের কিছু যুদ্ধবিমান গিয়েছে, কিন্তু তারা স্পষ্ট করে কখনো বলেনি যে পাকিস্তান তাদের কোনো রাফাল গুলি করে নামিয়েছে। বিদেশি বিশ্লেষণগুলো অন্তত একটি রাফাল নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও, ভারত এটাকে পাকিস্তানের হাতে “শট ডাউন” হিসেবে মানতে রাজি নয়।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো ফরাসি নৌবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ফরাসি প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্যারিস থেকে জারি করা বিবৃতিতে ফরাসি নেভি স্পষ্ট জানিয়েছে—পাকিস্তানি গণমাধ্যম ক্যাপ্টেন লনের নামে যে বক্তব্য প্রচার করেছে, সেগুলো “মনগড়া” ও “বিকৃত”; তিনি কনফারেন্সে রাফাল ভূপাতিত হওয়ার কোনো নিশ্চিত সংখ্যা দেননি, এমনকি চীনা জে-১০সি–এর নামও উল্লেখ করেননি। ফ্রান্সের দাবি, লনে কেবল নিজের ঘাঁটির রাফাল মেরিন ও ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপের সক্ষমতা নিয়ে প্রযুক্তিগত প্রেজেন্টেশন করেছেন, কিন্তু ভারত-পাকিস্তান আকাশযুদ্ধের ফল নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেননি।

ফরাসি অবস্থান অনুযায়ী, পাকিস্তানি মিডিয়া তাঁর প্রেজেন্টেশন থেকে নির্বাচিত অংশকে বড় করে তুলে ধরে এমন একটি ধারণা দিয়েছে যেন ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে—মে মাসে ভারত একাধিক রাফাল হারিয়েছে এবং পাকিস্তানের অপারেশনাল দক্ষতা জে-১০সি প্ল্যাটফর্মের চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্যারিস এই বর্ণনাকে সরাসরি ‘ডিসইনফরমেশন’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এসব দাবি ভারতের সঙ্গে চলমান প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব ও ফরাসি অস্ত্রবাজারকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিকঘনিষ্ঠ মহল লনের প্রেজেন্টেশনকে নিজেদের পক্ষে বড় কূটনৈতিক ও মানসিক বিজয় হিসেবে দেখছে। তাদের বক্তব্য, বিশ্বজুড়ে সামরিক স্টাফ কলেজ ও ওয়ার-গেমে এখন মে ২০২৫-এর এই সংঘর্ষকে আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা, নেটওয়ার্কভিত্তিক কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল ও উচ্চচাপের মধ্যে পাইলটদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি বাস্তব পরীক্ষাগার হিসেবে দেখা হচ্ছে, আর সেখানে পাকিস্তানের ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা ও পাইলটদের পারফরম্যান্সকে ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে, ভারত নৌবাহিনীর জন্য বিমানবাহী রণতরি থেকে পরিচালনাযোগ্য রাফাল এম সংস্করণ কেনার উদ্যোগ জোরদার করেছে, যা ফরাসি রণতরিবাহিনী ইতিমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে ব্যবহার করছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাফাল ঘিরে চলা এই তথ্যযুদ্ধ শুধু ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নয়, বরং ফ্রান্স-চীন অস্ত্রবাজার প্রতিযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত ভারসাম্য এবং ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা চুক্তির দিকও নির্ধারণ করে দিতে পারে।


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। 

১১২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন














সর্বশেষ সব খবর
ফিচার নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন