শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলই কি মূল ভরসা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের পর তাকে ভারতে থেকে ফিরিয়ে আনতে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ শুরু করেছে বাংলাদেশ।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় নোট ভারবাল পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ ছাড়া ইন্টারপোলেও নতুন করে নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। কিন্তু ভারত কি এক চিঠিতেই তার মিত্রকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে?
লন্ডনভিত্তিক পাঁচটি মানবাধিকার ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়কে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব, মানবাধিকার হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে যৌথ চিঠি পাঠিয়েছে। সংগঠনগুলোর দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ১৯৭১ সালের নৃশংসতার মতো জটিল অপরাধের বিচার পরিচালনা করেছে। তাঁর দাবি, আদালতে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ হয়েছে তা বিশ্বের যে কোনো আদালতে গ্রহণযোগ্য।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে উসকানিমূলক ও ঘৃণাসূচক বক্তব্য দিয়ে দলের নেতাদের সহিংসতায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি একাধিকবার আদালতের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘হেইট স্পিচ’ ছড়িয়েছেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। এক টেলিফোন আলাপে তিনি অভিযোগের সংখ্যা অনুযায়ী ‘হত্যার লাইসেন্স’ পাওয়ার কথাও বলেন-যা রায়ে উল্লিখিত হয়েছে।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার রায় ঘোষণা করে। শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান: মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন: ৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করলে শাস্তি বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। কিন্তু আপিলের কোন সম্ভাবনাই পাওয়া যায়নি। কারণ রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে, এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ধরণের রায়কে 'ভয় পাই না' বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তাই ২০১৩ সালের বাংলাদেশ–ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ফেরত চাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা। চুক্তি অনুযায়ী, ন্যূনতম ১ বছরের দণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডপ্রাপ্ত যে কাউকেই প্রত্যর্পণ করা সম্ভব-যদিও রাজনৈতিক অপরাধ এ থেকে ব্যতিক্রম।
তবে ভারতীয় বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ও মানবিক বিবেচনায় নয়াদিল্লি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না। সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, 'ভারত তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে না।'
চুক্তির অনুচ্ছেদ ৬-৮ অনুযায়ী,
– রাজনৈতিক অপরাধ হলে প্রত্যর্পণ নাও হতে পারে।
– অপরাধের উদ্দেশ্য বা বিচার প্রক্রিয়াকে ‘অন্যায্য’ মনে হলে আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
২০১৬ সালে করা সংশোধনীতে বলা হয়, কেবল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই প্রত্যর্পণের অনুরোধ যথেষ্ট।
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, ভারত চুক্তির ব্যাখ্যায় নমনীয় না হলে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সে কারণে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির চেষ্টা বাড়ানো হচ্ছে। আগের সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ৬২ জনকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরাতে ব্যর্থ হলেও নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর ভারত জানিয়েছে, তারা বিষয়টি 'অবগত' এবং বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করবে। তবে প্রত্যর্পণ নিয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান জানায়নি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা তদন্তাধীন আছে, যেখানে গুম, হত্যা ও সহিংসতার নির্দেশদাতা হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন আদালত ও থানায় তার বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ৫৮৬টি, যার মধ্যে দুদকের ৬টি মামলা রয়েছে।
১০৯ বার পড়া হয়েছে