‘আমি ও আমার হেমন্ত’
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ ৬:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
হেমন্ত! আমাকে খুব গভীরভাবে স্পর্শ করা ঋতুর নাম।
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত—সবখানেই আমি আনমনা;
প্রতি মুহূর্তের সাথে প্রকৃতির যে মিল-বন্ধনে বাঁধা,
তা শুধু ছোঁয়া নয়, আত্মার সম্পর্কের সঙ্গে গাঁথা।
সকালের সদ্য শুকিয়ে যাওয়া শিশিরে ভেজা মাঠ,
যা কিছু দিন আগেও কর্দমাক্ত ছিল;
দুপুরের মৃদু বাতাসে গাছের ডালে বসে থাকা পাখির ডাক,
খালের কিনারে হিজল গাছের ডালে মাছ ধরার অপেক্ষায় বেহালের বাঁশে বসে থাকা পাখি;
হেমন্তের বিকালে মাঠে ঘাটে কিশোর কিশোরীদের ছোটাছুটি,
গোল্লাছুট বা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলা কিংবা খাল-নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে বড়শি দিয়ে পুঁটি মাছ ধরা;
সন্ধ্যায় আকাশে পাখির দল উড়ে যায় দূর নীলে,
চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়েও এমন রং ফোটে না;
লাল, কমলা, বেগুনি—রংয়ের খেলা মনে দোলা দিয়ে চলে,
সৃষ্টির এই মহাআড়ম্বর দেখে প্রাণ ভরে উঠে।
রাতে জোনাকি আলোয়, জ্যোৎস্নায় ভরা পথ,
ঘুরে বেড়াই গ্রামের আঁকাবাঁকা সব রাস্তায়;
আহ্ কত সুন্দর মূহুর্ত যেন জীবনপুঁথির সুন্দর অধ্যায় গাঁথা।
তাই বলতে ইচ্ছে করে—-
"মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে" —
এই কথাই যেন ফুটে ওঠে হৃদয়ের সব কথায়।
আড়িয়াল খাঁ নদীর কোল ঘেঁষে দাড়টানা সাম্পান,
বড় নৌকা, মালবোঝাই কার্গো জাহাজের মিছিল;
আমরা জাহাজে ঢিল ছুড়ে মারতাম যেন তারা পাথর ছুড়ে মারে,
তারপরে সেই পাথর নিয়ে আমরা খেলতে যেতাম।
আহ্ কি স্মৃতি! কত কি অকৃত্রিম মিল!
হেমন্তের শেষে শীতের আগমনে খেজুর গাছ কাটা,
ডাল দিয়ে গড়তাম গরু-মহিষ, খেলতাম গরুর হাট;
আহা! কোথায় গেল সেই সোনালি দিনের পাতা?
কেন আজ এত হারিয়ে গেল সেই সব স্মৃতি গাঁথা ?
আহ্ কোথায় গেল সেই দিন?
হেমন্তের ফুলের গন্ধ, ধানক্ষেতের সুরভি মমতা,
দিনের বেলা ধান কেটে জ্যোৎস্নারাতে মাড়াই করা;
ধান ভানার গীত গাইতে গাইতে কৃষকের মুখের ছটা—
সেসব স্মৃতি কি আর ভোলা যায়?
যাদের কৈশোর গ্রামে কেটেছে হেমন্তের ডাকে,
তারা কি আজও ভোলে ওই সকাল-সন্ধ্যার গান?
আমি এমপি মন্ত্রী হয়েও যে সুখ পাবো না,
তার চেয়ে বেশি যে থাকে আমার গ্রামের হেমন্তে—
সেই তো আমার প্রাণ।
ধন্যবাদ, হে হেমন্ত, হে স্মৃতির ভুবন,
তোমারেই নিয়ে লিখি আমি………….
তোমার ছন্দে, তোমার গন্ধে আজো মিশে আছে এ জীবন।
১৩৭ বার পড়া হয়েছে