শতাধিক খাদ্যপণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার ট্রাম্প প্রশাসনের
শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ৪:২৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ক্রমবর্ধমান নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে ভোটারদের অসন্তোষের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই শতাধিক খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার প্রকাশিত তালিকায় কফি, গরুর মাংস, কলা ও কমলার রসের মতো মার্কিন নাগরিকদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত বহু পণ্যের নাম রয়েছে। সিদ্ধান্তটি বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে বলে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে। খবর রয়টার্স।
এ পদক্ষেপকে ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বঘোষিত অবস্থান থেকে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতদিন ট্রাম্প দাবি করে আসছিলেন, তার বিস্তৃত শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। যদিও সামগ্রিকভাবে দেশে ‘প্রায় কোনো মুদ্রাস্ফীতি নেই’ বলেই তিনি দাবি করেন।
সম্প্রতি ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি ও নিউ ইয়র্ক সিটির স্থানীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে জীবনযাত্রার ব্যয়-বিশেষত খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকদের মত। এ প্রেক্ষাপটেই ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক কমানোর পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ট্রাম্প আরও জানান, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের সহায়তায় আগামী বছর শুল্ক রাজস্ব থেকে ২ হাজার ডলারের একটি পেমেন্ট দেওয়া হবে।
শুক্রবারের ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা ও এল সালভাদর থেকে কয়েক ধরনের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তির কথাও জানানো হয়। বছরের শেষের আগেই আরও কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্য রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
প্রকাশিত তালিকায় যে সব পণ্যের দাম এ বছর দুই অঙ্কে বেড়েছে, তার বহু পণ্যই অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে কমলা, কোকো, পাপরিকা, আসাই বেরি, কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত নানা রাসায়নিক, সার এবং এমনকি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত কমিউনিয়ন ওয়েফারও।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তোলার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত বা প্রক্রিয়াজাত নয়—এমন কিছু খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্তি যৌক্তিক বলেও মন্তব্য করা হয়।
সরকারি তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে গরুর কিমার দাম আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ এবং স্টেকের দাম ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে- যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটি বিশ্বের অন্যতম গরুর মাংস উৎপাদক হলেও পশুর ঘাটতির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দাম বেড়ে চলেছে। এ ছাড়া কলার দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ এবং টমেটোর দাম ১ শতাংশ। বাড়িতে খাওয়ার খাদ্যপণ্যের সামগ্রিক মূল্য বেড়েছে ২.৭ শতাংশ।
শুল্ক প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী। খাদ্যশিল্প সমিতি এফএমআই-এর প্রধান লেসলি সারাসিন বলেছেন, নীতি পরিবর্তনটি উৎপাদন ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে এবং ভোক্তাদের জন্য বিশেষ করে এক কাপ কফির দাম আরও সহনীয় হবে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মদ্যপানযোগ্য স্পিরিট শুল্কমুক্তির আওতায় না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে ডিস্টিলড স্পিরিটস কাউন্সিল। তাদের প্রধান ক্রিস স্বোয়ানগারের মতে, স্কচ, কনিয়াক বা আইরিশ হুইস্কির মতো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করা সম্ভব নয়; সেগুলো বাদ পড়ায় আতিথেয়তা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও শুল্ক প্রত্যাহারের পরিকল্পনা আছে কি না- এ প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয় এর প্রয়োজন হবে না। আমরা মূলত খুব সামান্য রোলব্যাক করেছি। কফির দাম একটু বেশি ছিল; দ্রুতই কমে আসবে।”
১১২ বার পড়া হয়েছে