বাংলাদেশে সহিংসতার নেপথ্যে ভারত: সীমান্ত-সৃষ্ট নাশকতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক প্রশ্ন
বৃহস্পতিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ৪:১৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নকল টাকা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবাহ কেবল চোরাচালানের সাধারণ ঘটনা নয়—এতে ভারতের রাষ্ট্রীয় অমার্জনীয় অবহেলা ও নিচুস্তরের পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন।
পাশাপাশি, ভারতের রাজধানী লুটিয়েন্সে অবস্থান নেয়া বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠান গভীরভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে, যা জাতির স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে উঠেছে।
সীমান্তের অপরাধ: উৎস, প্রবাহ ও ভারতের দায়
বর্তমান তথ্য বলছে, নকল টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরকদ্রব্য মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে উৎপাদিত ও সরবরাহ হয়। চোরাপথে এগুলো কাঁটাতার পেরিয়ে, নদীপথ ও গোপন রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে—যেখানে স্থানীয় দালাল, ভারতীয় সিন্ডিকেট ও চোরাকারবারীদের মদত স্পষ্টভাবে পাওয়া যাচ্ছে। র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধরা পড়া অস্ত্র ও টাকা প্রায়শই ভারতীয় উৎস চিহ্নিত করছে।
সীমান্তে এই ধরনের অবৈধ প্রবাহ সাময়িক সংস্থাপন নয়, বরং এটি বছরের পর বছর চলমান একটি কাঠামোগত অপরাধ–যার পেছনে ভারতের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, দুর্নীতিগ্রস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সেভাবে রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার অভাব সুস্পষ্ট।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা ও নিশ্চুপ অবস্থান
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ—ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখের সামনেই এই চোরাচালান চলছে। কাঁটাতার, নজরদারি ক্যামেরা ও সরকারি প্রবেশনীর বলয় শক্তিশালী ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, প্রতিদিন নকল কারেন্সি ও অস্ত্র সীমান্ত অতিক্রম করছে; এখানে নিয়ন্ত্রণহীন এস্কেপ রুটের জোরালো সংযোগ, স্থানীয় বিএসএফ ও প্রশাসনের গাফিলতি, এবং অভিযোগযোগ্য দালালি রয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রশ্নবিদ্ধতা
ভারত সরকার এ বিষয়ে মাঝে মাঝে যৌথ বৈঠক বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিলেও, মূল সমস্যার বাস্তব দায়ভার নেয়ার বদলে নিজেদের দিক দোষে ঢাকতে সচেষ্ট—এটাই বারবার প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক মহলে এমনকি দুই প্রতিবেশীর পারস্পরিক আস্থা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা হুমকিতে পড়ছে, এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশ দুর্বল হচ্ছে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: নিষিদ্ধ নেতা ও লুটিয়েন্স ঘিরে নাশকতা
বাংলাদেশে গণহত্যা, রাজনীতি ধ্বংস, লুট ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে পালানো বিতর্কিত নেতা শেখ হাসিনা, এখন ভারতের রাজধানীতে অবস্থান করছেন—এই অভিযোগও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তাঁর নেতৃত্বে ও ভারতের মিডিয়া-বুদ্ধিজীবী পৃষ্ঠপোষকতায়, গত প্রায় ১৫ মাস ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সহিংস ঘটনা এবং প্রোপাগান্ডার প্রবাহ গতিশীল হয়েছে, যার জন্য ভারতের ক্ষমতাকাঠামোকেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহ-অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সার্বভৌম চেতনা ও নতুন প্রজন্মের প্রত্যাখ্যান
যেখানেই ভারতের বহুকৌশলী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, সেখানেই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, মুক্তবুদ্ধি, ও স্বাধীনতা চেতনা তা প্রত্যাখ্যান করছে। প্রগতিশীল ছাত্র, গবেষক ও নাগরিক সমাজ ভারতের ক্ষমতা-কেন্দ্রিক আচরণ ও ক্ষুদ্র রাজনীতি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান করেছে—এটি ইতিহাস-ভূগোল ও বর্তমান-ভবিষ্যতের সব স্তরে স্পষ্ট।
আসল কথা
এখন স্পষ্ট: চোরাচালান হোক কিংবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সীমান্তপারের এই পরিস্থিতির জন্য ভারতের রাষ্ট্রীয় আধিপত্যবাদ, প্রশাসনিক প্রয়াসই দায়ী। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্ব ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় জননিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে না—যার দায় ভারতের বলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বার বার হস্তক্ষেপ করেছে এবং অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত থেকে নাশকতায় সহযোগিতা করছে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
১২৭ বার পড়া হয়েছে