সর্বশেষ

ফেবু লিখন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যোগদান: একটি নৈতিক দ্বিধা

রেজাউল করিম
রেজাউল করিম

শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫ ৭:২০ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজনীতি হওয়া উচিত জনসেবার মহান ব্রত, দেশ ও মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণদের মিলনক্ষেত্র।

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা প্রায়শই এই আদর্শ থেকে বিচ্যুতির করুণ দৃশ্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে সফল হওয়ার জন্য যে বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হয়, তা একজন সচেতন নাগরিককে গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত করে।

একজন সফল রাজনীতিবিদ হতে গেলে প্রথম যে মূল্য দিতে হয় তা হলো অফুরন্ত সময়। এখানে সততা ও পেশাদারিত্বের চেয়ে দলের প্রতি অতি চাটুকারীতা, আনুগত্য ও সারাক্ষন লেগে থেকে সময়দানকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনাকে নির্লজ্জ বেহায়া হতে হবে কারন রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ আপনাকে ঘায়েল করার জন‍্য বা ছোট করার জন্য আপনার বিরুদ্ধে যে কোন মূহুর্তে মিথ্যা অপবাদ অপপ্রচার করতে পারেন; আপনাকে অযোগ্য হতে হবে কারন যোগ‍্য হলে আপনি তৈলবাজি করতে পারবেন যা ছাড়া বড় নেতারা খুশি হবেন না; আপনাকে অসৎ ও প্রকৃত অপরাধী হতে হবে কারন অপরাধ না করলে রাজনীতির মাঠে টিকবেন না; আপনাকে মিথ‍্যা বলতে জানতে হবে কারন সত‍্য বললে আপনার নেতা আপানর প্রতি খুশি না হয়ে উল্টা বহিস্কার করতে পারেন; সত্য উচ্চারণের সাহস দেখালে নেতৃত্বের রোষাণলে পড়ার ঝুঁকি থাকে, যা বহিস্কার বা পদচ্যুতির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত ডেকে আনতে পারে।

বর্তমান ব্যবস্থায় ব্যক্তিত্ববান ও যোগ্য মানুষের চেয়ে বেশি মূল্য পায় তারা, যারা অনুকূল পরিবেশ তৈরির (তৈলবাজি) দক্ষ। এখানে নীতির চেয়ে কৌশলকেই বড় করে দেখা হয়। নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে অযৌক্তিক আপমান ও অবহেলা সহ্য করার মানসিকতা একটি অলিখিত প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনীতিকে আজ একটি বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয়। এই বিনিয়োগের রিটার্ন পেতে গেলে চাঁদাবাজির মতো অসৎ উপায়ে অর্থোপার্জনকে অনেকেই অনিবার্য ভাবে। কারণ, গুন্ডা-ক্যাডারদের লালন-পালনের মতো বিশাল আর্থিক বোঝা হালাল উপার্জন দিয়ে মেটানো প্রায় অসম্ভব।

নির্দিষ্ট কিছু দলে প্রবেশ করতে গেলে আপনাকে সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা বা আদর্শিক চেতনা থেকেও সরে আসতে হতে পারে। নইলে আপনি একঘরে হয়ে যেতে পারেন। এখানে কোন গঠনমূলক সমালোচনা শত্রুতার সমান বিবেচিত হয়। সর্বদা ষড়যন্ত্রের সংস্কৃতি এর মাঝে বসবাস করতে হয়, যেখানে সতর্কতা ও সন্দেহের পরিবেশ বিরাজ করে।

একটি মৌলিক প্রশ্ন: তাহলে একজন সচেতন নাগরিকের ভূমিকা কী? এমন পরিবেশে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: যদি কেউ আত্মসম্মানী, যোগ্য, এবং একটি সুন্দর পেশা ও পারিবারিকভাব্ সুখে থাকেন, তাহলে তাঁর উচিত হবে কি এমন একটি জটিল ও প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে সম্পৃক্ত করা বা কোনভাবে অংশ নেওয়া? নাকি সমাজসেবা, স্বেচ্ছাশ্রম, civil society (সিভিল সোসাইটি) বা অন্য কোনো মাধ্যমে দেশের সেবা করা (বেশি) যুক্তিসঙ্গত?

আমি মনে করি, আল্লাহ প্রদত্ত বিবেকই (আমাদের) সর্বশ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক। এই বিবেকই আমাদেরকে বিশ্লেষণ, ব‍্যাখ‍্যা, ভালো মন্দের তফাৎ (প্রভেদ) করতে শেখায় কোন পথটি সঠিক। কারো গোলামি করে ক্ষমতার মোহে পড়ে থাকার চেয়ে, একজন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নাগরিক হিসেবে নিজের পছন্দমতো এবং নীতিগতভাবে সঠিক উপায়ে দেশসেবা করাই অধিকতর সম্মানজনক। রাজনীতি যখন নৈতিক Compass (কম্পাস) হারিয়ে ফেলে, তখন সেখানে যোগদান না করে বরং এর সংস্কারের জন্য কণ্ঠস্বর তোলাই হলো প্রকৃত দেশপ্রেমের পরিচয়।



লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

১৩০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন