বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থ-বিরোধে আন্তর্জাতিক সালিশে যাচ্ছে আদানি
মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ ৫:৩৮ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে অর্থপ্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার।
সোমবার এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি এ তথ্য জানিয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদানি পাওয়ার জানায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কিছু ব্যয় ও বিল নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষই আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানে যেতে সম্মত হয়েছে। কোম্পানির আশা, এ প্রক্রিয়ায় দ্রুত, কার্যকর ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে।
তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে। আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সালিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়।”
২০১৭ সালে আদানি পাওয়ার ও বিপিডিবির মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (Power Purchase Agreement - PPA) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ আসে আদানি পাওয়ারের সরবরাহ থেকে।
রয়টার্সের এক আগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর-সুবিধার ছাড় বাংলাদেশকে না দেওয়ায় এই বিরোধের সূত্রপাত।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা (০.১২২ মার্কিন ডলার) হারে মূল্য পরিশোধ করেছে—যা অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় দামের (প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ৫৭ পয়সা) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
একসময় আদানি পাওয়ারের পাওনা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও, ২০২৪ সালের মে মাসে তা নেমে আসে ৯০০ মিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে বকেয়া অর্থ প্রায় ১৫ দিনের বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল্যের সমান বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
রয়টার্সের দেখা সরকারি নথি অনুযায়ী, চুক্তিতে বলা হয়েছিল—ভারত সরকারের কাছ থেকে কর ছাড় পেলে তা বাংলাদেশকেও জানাতে হবে এবং প্রয়োজনে বিদ্যুৎমূল্যে ছাড় দিতে হবে। কিন্তু বিপিডিবির দু’বার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও আদানি পাওয়ার কোনো সাড়া দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, ভারত সরকারের দেওয়া কর ছাড়ের সুবিধা মূল্য নির্ধারণে প্রতিফলিত হলে বাংলাদেশের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে প্রায় ০.৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হতো। এতে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহকৃত ৮.১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের জন্য প্রায় ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার সঞ্চয় সম্ভব ছিল।
বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। কোম্পানিটি আরও জানায়, গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য পূরণেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
১০৯ বার পড়া হয়েছে