সর্বশেষ

মতামত

টাকার কাছে নীতি-নৈতিকতা, ন্যায়বিচারও যেন অচল!

হেলাল উদ্দিন
হেলাল উদ্দিন

শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
টাকায় বাঘের চোখ পাওয়া যায়—এ কথাটা যেন আজ সত্য প্রমাণিত। টাকার কাছে সব নীতি-নৈতিকতা, আইন-কানুন, এমনকি ন্যায়বিচারও যেন অচল হয়ে পড়েছে।

কেউ কি ভাবতে পারত, একজন কুখ্যাত অপরাধী—যিনি জুলাই গণহত্যাসহ এক ডজন গুরুতর মামলার আসামি, সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী—তিনি গোপনে জামিন পেয়ে নির্বিঘ্নে দেশ ত্যাগ করতে পারবেন?

বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসা অঙ্গনের বহুল আলোচিত নাম দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। হত্যাসহ একাধিক মামলা, মানি লন্ডারিং, স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালান এবং প্রতারণার মতো গুরুতর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের।

কিন্তু অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর গোপনে কারাগার থেকে বের হয়ে থাইল্যান্ডে প্রমোদ ভ্রমণে যান—যার পেছনে রাজনৈতিক সহায়তা ও রাষ্ট্রীয় মদদের প্রশ্ন উঠেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ২২ জুলাই ২০২৫ তারিখে দিলীপ আগরওয়ালা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কিছুদিন পর সেটি প্রত্যাহার করা হয়।

জুলাই মাসে হত্যাসহ একাধিক মামলায় তিনি জামিন পান, এবং কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে মুক্তি পান—যা নিয়ে আদালতপাড়ায় তীব্র আলোচনা ও প্রশ্নের ঝড় বইছে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতে র‍্যাব তাকে গুলশান থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। ৭ সেপ্টেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানোর পরই অস্বাভাবিক দ্রুততায় জামিন মঞ্জুর হয়। এরপর, পূর্বনির্ধারিত ইঙ্গিত পেয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবন্ধকতা না দিয়েই তাকে বিদেশগমন করতে দেয়।

দিলীপ আগরওয়ালার এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয়—দেশের বিচারব্যবস্থা কতোটা অর্থ, প্রভাবশালী বন্ধুত্ব ও রাজনৈতিক সংযোগের কাছে নত হতে পারে।

এটি কেবল একজন ব্যক্তির অনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়; বরং রাষ্ট্রের আইনের শাসন, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং সাধারণ নাগরিকের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থার উপর এক গভীর আঘাত।

এখন প্রশ্ন একটাই—আইন কি প্রভাব ও বন্ধুত্বের কাছে পরাজিত হবে?

রাষ্ট্রের কর্মকর্তা, বিচারক, প্রশাসন—তারা কি এত বড় অনৈতিকতার সামনে নীরব দর্শক হয়ে থাকবে?


এই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—দেশে আইনের শাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এখনই কঠোর, স্বচ্ছ এবং নৈতিক অবস্থান নেওয়া জরুরি।

 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক। 

১৬৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন