পাহাড়ে সংঘাত: খাগড়াছড়ি-গুইমারায় রণক্ষেত্র, ১৪৪ ধারা জারি

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:০১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
খাগড়াছড়ি ও গুইমারা উপজেলায় আবারও উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল থেকে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ার ও গাছের গুড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে অবরোধকারীরা সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডা এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে ১১ সেনা সদস্য আহত হন। উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে গুইমারা এলাকায় পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। আহত হয়েছেন বহু স্থানীয় বাসিন্দা। আশপাশের এলাকায় অগ্নিসংযোগ এবং পাহাড়ি-বাঙালি গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তবে সংঘর্ষের জন্য পাহাড়িদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনী এবং একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলকে দায়ী করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
এর আগে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা খাগড়াছড়ি জেলা শহরে দ্বিতীয় দফার অবরোধ চলাকালে শহরের স্বনির্ভর, চেঙ্গী এস্কয়ার, নারিকেল বাগান ও মহাজনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। দুপুরের পর থেকে শহরের পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে এবং বিকেলের মধ্যে তা একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে চলা সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন এবং বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার শনিবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় নেওয়া এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জনসমাগম ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়।
পরদিন রোববারও খাগড়াছড়ি শহর অনেকটা জনশূন্য ছিল। গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হননি। প্রশাসনের টহল ও নজরদারিতে পুরো এলাকা ছিল চরম সতর্ক অবস্থায়।
এদিকে, ধর্ষণ মামলার মূল অভিযুক্ত চয়ন শীল নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে মামলার আরও দুই অজ্ঞাতনামা আসামির গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে খাগড়াছি জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাও উপস্থিত ছিলেন।
সংঘাতের প্রভাবে খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জেলার অন্যান্য উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং অবরোধের কারণে খাগড়াছির জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা সাজেকেও ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে সেখানে আটকে পড়া প্রায় ২ হাজার ১৪৭ জন পর্যটককে সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তায় সোমবার রাতে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বর্তমানে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
১১৯ বার পড়া হয়েছে