সর্বশেষ

সারাদেশ

চকরিয়ায় চিংড়ি খাতে বিপর্যয়: প্রকৃতির বৈরীতায় উৎপাদনে ধস

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার প্রতিনিধি

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
চকরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস চিংড়ি খাত চলতি মৌসুমে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং খাল দখলসহ একাধিক কারণ চিংড়ি উৎপাদনে ব্যাপক ধস নামিয়েছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন হাজারো চাষি ও খামার মালিক।

চাষিদের অভিযোগ, এ বছর আবহাওয়া ছিল চরম রকমের বৈরী। তেমন বৃষ্টি না হওয়া এবং বড় ধরনের বন্যা না আসায় ঘেরে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে একাধিকবার চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দেয়। একই সঙ্গে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ, ঘেরের অপ্রতুল গভীরতা এবং প্যারাবন নিধনের মতো কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,

২০২২ সালে: ৬,৮২৮টি ঘেরে উৎপাদন হয়েছিল ৮,৪২০ টন
২০২৩ সালে: ৭,৪৪৭টি ঘেরে উৎপাদন ছিল ৯,২১৬ টন
২০২৪ সালে: ৭,৭৬৪টি ঘেরে উৎপাদন হয় ৯,৫১৬ টন

 

তবে চলতি ২০২৫ সালের মৌসুমে চাষিরা বলছেন, উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে, মৌসুম শেষ হতে দেড় মাস বাকি থাকলেও অনেকেই বিনিয়োগের অর্ধেকও ফেরত পাননি।

চকরিয়া উপজেলার রামপুর, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, বদরখালী, বড় ভেওলা, কোনাখালী ইউনিয়নে প্রায় ১৮ হাজার ৪৪৪ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা হলেও এখন তা ক্রমেই সংকুচিত ও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সূত্র অনুযায়ী, ২০০৫ সালে যেখানে উৎপাদন ছিল প্রায় ৯ হাজার ৫০৬ টন, সেখানে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার টনে।

চাষিদের অভিযোগ, প্রবহমান ১১টি খাল অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করার ফলে জোয়ার-ভাটার পানির চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঘেরে লবণাক্ত পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, প্যারাবন নিধন করে ঘের সম্প্রসারণ করায় পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হয়েছে।


চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন জানান, “চিংড়ি উৎপাদন হ্রাসের পেছনে প্রকৃতির বৈরী আচরণ, পোনা সংকট এবং খাল বন্ধ থাকার বিষয়গুলো প্রধান ভূমিকা রেখেছে। অনেক ঘেরেই সঠিক গভীরতা নেই। আমরা রামপুর এলাকায় স্লুইসগেট নির্মাণসহ বেড়িবাঁধে প্যারাবন সৃষ্টি করছি। এতে পরিবেশ কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হবে।”

 

সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী গ্রামের বড় খামার মালিক আবু তৈয়ব জানান,“এ বছর আমি ১ হাজার একরে চিংড়ি চাষ করেছি, প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখনও পর্যন্ত ৭০-৭৫ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি করেছি। মৌসুম শেষে হয়তো কিছুটা ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারি, তবে তাও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”

 

চিংড়ি চাষি নজরুল ইসলাম জানান, “এক সময় প্রতি হেক্টরে ৫০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হতো, এখন তা কমে ২০০ কেজির নিচে নেমে এসেছে। গত মৌসুমে লবণেরও ন্যায্যমূল্য পাইনি।”

চাষিরা অভিযোগ করছেন, ঘের এলাকায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি এবং সন্ত্রাসী তাণ্ডব চিংড়ি চাষকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। চকরিয়া থানার ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘের এলাকায় যাতায়াতের অসুবিধা থাকায় নিয়মিত টহল দিতে সমস্যা হয়।”

চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এম. মনছুর আলম রানা বলেন, “চকরিয়ায় একসময় সুন্দরবনের মত পরিবেশে চিংড়ি চাষ হতো। এখন প্যারাবন নিধনের কারণে সেই পরিবেশ হারিয়ে গেছে। কিছু এলাকায় নতুন করে প্যারাবন তৈরি হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।”

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন,“চিংড়ি ঘের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করতে পারলে এই খাতে আবারও সুদিন ফিরবে।”

১১৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন