সর্বশেষ

জাতীয়

জীবনের ঝুঁকিতে ফাইটাররা: কেমিক্যালের তথ্য গোপনে বাড়ছে প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৭:২৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
প্রতিবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা—জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভানোর এই যুদ্ধে বারবারই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরিণত হচ্ছেন মৃত্যুর শিকার।

কারণ একটাই—ঘটনাস্থলে থাকা কেমিক্যাল বা দাহ্য পদার্থ সম্পর্কিত তথ্য গোপন করা। ফলে সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে গিয়ে বিস্ফোরণের কবলে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন ফায়ার ফাইটাররা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৯ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে গত এক দশকে মারা গেছেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন আরও ৩৮৬ জন সদস্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটে কেমিক্যাল কারখানার আগুন নেভাতে গিয়ে, যেখানে আগুনের ধরন কিংবা বিস্ফোরণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে পূর্ব কোনো ধারণা থাকে না ফায়ার ফাইটারদের।

২০২২ সালের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ১৩ জন ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর একটি কেমিক্যাল গুদামে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হন চার কর্মী। পরদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ। অপর দুই জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, ‘‘আমাদের যথেষ্ট সরঞ্জাম থাকলেও, আগুন লাগার সময় গুদামে বা ভবনে কী ধরনের দ্রব্য আছে—সে তথ্য সময়মতো জানানো হয় না। ফলে আমাদের কর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিস্ফোরণের মুখে পড়ে যান।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘টঙ্গীর ঘটনায়ও গুদামে কী ছিল, তা কেউই জানাতে পারেনি। উত্তেজিত জনতা দ্রুত আগুন নেভানোর চাপ দিলে ফায়ার ফাইটাররা ভেতরে প্রবেশ করেন। সে সময় আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটে।’’


অভিযোগ রয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় উত্তেজিত জনতা দ্রুত আগুন নেভাতে বলায় ফায়ার ফাইটাররা পর্যাপ্ত মূল্যায়ন ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ করতে বাধ্য হন। শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘‘তথ্য না থাকা এবং জনতার চাপ—দুটি মিলে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। ডিফেন্সিভ কৌশল নিলে প্রাণহানি এড়ানো যেত।’’


ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘কেমিক্যাল সেফটি নিয়ে ব্যবসায়ী, মালিকপক্ষ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা ভয়াবহ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেফটি কমিটি, প্রশিক্ষণ, এমএসডিএস (Material Safety Data Sheet) থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথম সাড়াদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে দায় নিতে হবে। জবাবদিহিতা ও শাস্তি নিশ্চিত না হলে এমন মৃত্যুর মিছিল থামবে না।’’


বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো কেমিক্যাল কারখানার প্রবেশপথে বিপদসংকেত, কেমিক্যালের ধরন ও সতর্কীকরণ লেখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হয় না। শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘‘বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান চোরাইভাবে ব্যবসা চালায়, ফলে এ নিয়ম মানে না। শুধু গার্মেন্টসে কিছুটা মানা হয়।’’


জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি শতভাগ দগ্ধ ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার মামা অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, ‘‘প্রতিনিয়ত আহত-নিহতের খবর শুনি। কিন্তু কেউ যেন শুনছে না। যারা মানুষের জীবন বাঁচায়, তারা যদি বারবার মারা যায়, তাহলে মানুষকে বাঁচাবে কে?’’

১১৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন