আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও রাজনীতির নৈতিক অবক্ষয়

শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে উত্তাল, দোদুল্যমান এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, নানা সামরিক শাসন ও পেশিশক্তিনির্ভর শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতা, যেখানে উত্তরের জন্য মানুষের প্রত্যাশা—সুশাসন, জবাবদিহিতা ও নৈতিক নেতৃত্ব।
রাজনীতির মাঠে বর্তমানে পুরনো কৌলিন্য ভেঙে দেশ ও সমাজ পরিবর্তনের জন্য এক নতুন নেতৃত্ব ও চেতনার দাবি ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।
নতুন প্রজন্ম ও চিন্তাশীল সমাজের স্বপ্ন—একটি শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক এবং আধুনিক বাংলাদেশ, যেখানে অপমান, গালিগালাজ ও প্রতিপক্ষকে হেয়প্রতিপন্ন করার সংস্কৃতি নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও যুক্তিনির্ভর রাজনীতির বিজয় হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও উত্তাপময় পরিবেশে, নেতৃত্ব, স্বচ্ছতা, ও নীতিনৈতিকতাই হয়ে উঠছে একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত শক্তি।
জেএফকে বিমানবন্দরে আওয়ামীলীগের আচরণ
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধি দল, যার মধ্যে ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সেখানে সরকারি বিরোধী প্রতিনিধিত্বের অংশ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই সময়ে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী সেখানে ডিম নিক্ষেপ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূলত, এধরনের ‘অপমানের রাজনীতি’ই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতের প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে দিয়েছে বলে সামাজিক বিশ্লেষণে উঠে আসে।
ডা. তাসনিম জারার সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান
ডা. তাসনিম জারা একজন অত্যন্ত মেধাবী চিকিৎসক, হেলথ কমিউনিকেটর ও সমাজকর্মী। তার শিক্ষাজীবন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ—এবং রয়েল কলেজ লন্ডন থেকে অর্জিত। তিনি শুধুমাত্র ডাক্তার হিসেবে নয়, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও মানবিক উদ্যোগ (সহায় হেলথ) দিয়ে সমাজের নানা স্তরে অবদান রেখেছেন। ২০১৬ সালে বিশুদ্ধ ও সাধারণ জীবনযাপনের দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, দাদীর শাড়িতে বিয়ে করার অভিনব দৃষ্টান্ত সমাজে নারীর প্রতি ফ্যাশন ও আরোপিত সৌন্দর্যবোধের বিরুদ্ধে ভিন্ন আলোচনার সূত্রপাত করেছিল।
রাজনীতিতে তার পদার্পণ হয় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরবর্তিতে এনসিপি’র সিনিয়র সদস্য সচিব হিসেবে। এখানে তিনি স্বচ্ছতা, মানবিকতা ও নৈতিক শাসনের পক্ষে সাহসিক অবস্থান নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের চরিত্র সংকট
জেএফকে বিমানবন্দরে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সংকেত বহন করে — পুরনো দলীয়, পেশিশক্তিনিভর, অপমানজনক এবং গালিগালাজ নির্ভর রাজনীতি এখন জনমনে প্রবলভাবে অগ্রহণযোগ্য। ডা. তাসনিম জারা বলে এসেছেন—সম্মানের রাজনীতি, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা, শরীরচর্চা, স্বচ্ছতা, নারী নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত—বর্তমান সামাজিক চাহিদাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
নীতিগত অধঃপতনের কারণে আওয়ামী লীগ গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যবয়স্ক কিছু সদস্য দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অশ্লীলতা ও অপমানের ঘটনার জন্ম দিচ্ছে, যা শেখ মুজিব এবং হাসিনার ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই সংকটের কারণেই আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ফিরে আসতে পারবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এনসিপির ও ডা. জারা
এনসিপি ও ডা. তাসনিম জারার নেতৃত্বে দেশের যুবসমাজ, উচ্চশিক্ষিত, সামাজিকভাবে সচেতন মানুষ এক নতুন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। তার দলীয় স্বচ্ছতা, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, এবং নৈতিক শাসন—সব মিলিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে আধুনিক, সর্বজনস্বীকৃত একটি পথ উন্মোচনের সম্ভাবনা যুক্ত হচ্ছে।
মূল কথা
বাংলার রাজনীতি আজ যে সংকটে, সেখানে ডা. তাসনিম জারার মতো শিক্ষিত, মানবিক, উদারবোধ সম্পন্ন নেতৃত্বের উত্থানই চিন্তা ও মেধার আলো ছড়াচ্ছে। অতীত ও চক্রান্ত, গালি, অপমানের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে শান্ত, সম্মান, নৈতিকতাপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বপ্ন আজ জাগছে বহু মানুষের হৃদয়ে। আক্ষেপের কান্না, অপমানের জ্বালা, জাতীয় চরিত্রের সংকট — সব মিলে আগামী বাংলাদেশের রাজনীতি, ধর্ম ও সংবিধানপন্থী মধ্যপন্থা-নির্ভর একটি স্বাস্থ্যবান, মানবিক, নৈতিক দেশের ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে ডা. তাসনিম জারা-এর মতো তরুণ নেতৃত্ব।
রাজনীতির সামনে পথে বহু বাধা, উপহাস, কুৎসা, চক্রান্ত থাকবেই—তবুও এই আলোর দূতেরা পিছু হটে না। একটু ধৈর্য, আর একটু দৃঢ়তা—এই তরুণ-কণ্ঠে গেয়েই উঠবে বাংলাদেশের নতুন জয়গান।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট।
১২৯ বার পড়া হয়েছে