উত্তরে আগাম শীতের আমেজ, কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে ভোরের আকাশ

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আগাম শীতের আগমনী বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভোরের আকাশে ঘন কুয়াশা, হিমেল বাতাস এবং শিশিরভেজা প্রান্তর জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমন অত্যাসন্ন।
মৌসুমী বায়ুর নিষ্ক্রিয়তায় জেলায় বইছে উত্তরের পাহাড়ি ঠাণ্ডা হাওয়া।
গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রতিদিন ভোরে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। সকাল ৭টা পর্যন্ত চারদিক ঘিরে থাকে কুয়াশার পরত। তবে দিনের বেলায় সূর্যের তাপ কিছুটা গরম অনুভব করালেও, ভোর এবং রাতে ঠান্ডা হাওয়া জনজীবনে শীতের প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
পঞ্চগড়ের সাধারণ মানুষ শীতের এমন আগাম উপস্থিতিতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সন্ধ্যার পর ঠান্ডা অনুভব করায় অনেকে শীতের পোশাক ব্যবহার শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে মোটরসাইকেল চালকরা গরম কাপড় পরছেন।
জেলা শহরের লেপ-তোশক ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আগাম শীতের কারণে পণ্যের মজুত শুরু করেছেন তারা। ব্যবসায়ী মনছুর আলম বলেন, “শীত বাড়ার পর দাম বাড়ে, তখন তুলা আর কাপড় সংগ্রহ করাও কঠিন হয়। তাই আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
আবহাওয়ার এই হঠাৎ পরিবর্তনে শীতজনিত রোগ বেড়েছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শত শত রোগী আসছেন সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যায়।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, “আবহাওয়ার পরিবর্তনের এই সময়ে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হন। বাসি ও ঠান্ডা খাবার পরিহার এবং সন্ধ্যার পর বাইরে বের না হওয়া জরুরি।”
শীতের এই আগমন পঞ্চগড়ের কৃষকদের মাঝে নতুন উৎসাহ নিয়ে এসেছে। আগাম শীতের আমেজে শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি, আলু ও গমের চাষ। কৃষকরা মনে করছেন, এবার সময়মতো শীত নামলে ফলনও ভালো হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষা শেষে এই সময়ে এমন হিমেল আবহাওয়া সাধারণত দেখা যায় না। করতোয়া নদীর তীরে বসবাসকারী রাইজুল ইসলাম বলেন, “ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। মাঝে মাঝে বৃষ্টিও হয়। তখন আরও বেশি শীত অনুভূত হয়।”
হাফিজাবাদ ইউনিয়নের আল আমিন জানান, “সময় হিসেবে শীত আসতে দেরি থাকলেও গত কয়েকদিনের আবহাওয়া দেখে মনে হয় শীত চলে এসেছে।”
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, “মৌসুমী বায়ু নিষ্ক্রিয় থাকায় উত্তর দিক থেকে শীতল হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে কুয়াশা ও শীত অনুভূত হচ্ছে। আকাশে মেঘ থাকলেও বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।”
প্রতি বছর অক্টোবরের শুরুতে পঞ্চগড়ে শীতের শুরু হলেও এবার সেপ্টেম্বরেই শীতের আগাম উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই আগাম শীতের আমেজ জেলার মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষিকাজ ও ব্যবসার ওপর ইতোমধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। তবে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চললে এই পরিবর্তনকে উপভোগ্য করে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১১৬ বার পড়া হয়েছে