বিদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা আরপিওর সাথে সাংঘর্ষিক !

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আগমন উপলক্ষে গত রবিবার সন্ধ্যা হতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশি–অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটসে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
ড. ইউনুস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে তাঁর নিউইয়র্কে পৌঁছান। জেএফকে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ডিপ্লোমেটিক প্রটোকলে ইউনুস ও তাঁর সফরসঙ্গীরা ভিআইপি গেইট দিয়ে বের হলেও দুই সফরসঙ্গী এনসিপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহবায়ক ডা.তাসনিম জারা ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট না থাকায় সাধারণ গেইট দিয়ে বের হতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়া এরকম বেশকিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগের বেশকিছু কর্মীকে দেখা যায় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে। একপর্যায়ে তাদের একজন সিলেটের জকিগঞ্জের বাসিন্দা মিজানুর রহমান চৌধুরী ডিম ছুঁড়ে মারেন আখতারকে লক্ষ্য করে।
দুপুরে জেএফকে বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপকারী আওয়ামী সন্ত্রাসী মিজানুরকে নিউইয়র্ক পুলিশ জ্যাকসন হাইটস এলাকা হতে মাত্র ৫ ঘন্টার ব্যবধানে গ্রেফতার করেছে। এখন তাকে স্থানীয় আইনে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। অপরাধ প্রমানিত হলে মিজানকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা হতে পারে।
এই লেখার বিষয় গ্রেফতার নয়।
লেখার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা বিদেশে থাকতে পারে কিনা কিংবা নির্বাচন কমিশনের আরপিওর সাথে সাংঘর্ষিক কিনা।
বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা কেন থাকে এটা বোধগম্য নয়। ভারত,পাকিস্তানসহ কোন দেশের রাজনৈতিক দলের শাখা প্রশাখা বিদেশে নেই। যা আছে তা হলো সেই দেশের কমিউনিটির উদ্যোগে নির্দিষ্ট দেশের এসোসিয়েশন। যাদের কাজ প্রবাসে থাকা নিজ দেশের নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে পরামর্শ দেয়া, সহযোগিতা করা এবং জাতীয় দিবস উদযাপন কিংবা বছরে একবার কি দু'বার কোথাও অনুমতি সাপেক্ষে পিকনিক বা ঘরোয়া আলোচনাসভায় মিলিত হওয়া। এর বাহিরে তাদের কারো কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম ইউরোপ, আমেরিকা বা কানাডায় কোথাও দেখিনি।
আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আরপিও আছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা বা অফিস থাকতে পারবে না৷ তারপরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের বিদেশ শাখা আছে৷ তাদের কাজ কী?
এমন কি রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রেও বিদেশ শাখা বলতে কিছু নেই৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি কারো গঠনতন্ত্রে বিদেশে শাখার বিষয়ে কোন কিছুই নেই। ফলে যারা বিদেশে বসে রাজনীতি করেন এবং অমুক দেশের আওয়ামী লীগ বা বিএনপি শাখা বলেন, এসব শাখার মর্যাদা কী তা-ও স্পষ্ট নয়৷ যদিও বিদেশ শাখার নেতারা দাবি করেন, তারা মুলদলের কাছে জেলা কমিটির মর্যাদা পান!
হাস্যকর হলো, তাদের বিভাগীয় কমিটির মর্যাদা দেয়ার দাবিও তুলেছেন প্রবাসী কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা৷
রাজনৈতিক দলের প্রবাসী শাখাগুলো মূলত বিভিন্ন দিবসে সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে৷ তারা বিজয়দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালন করে বেশ বড় করে৷ আর দলীয় নেতাদের কেউ সফরে এলে তাদের নিয়েও সর্ম্বধনা দেয় ও সভা করে৷ তাদের মূল টার্গেট থাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা৷ পরবর্তীতে দেশে নির্বাচন এলে কেউ কেউ মনোনয়ন চাইতে দেশে ফিরে যান এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেন। বিগত দিনের নির্বাচনে অনেক প্রবাসী নেতা সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। এমন কি কেউ কেউ মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে প্রবাসে রাজনীতি করেন এরকম কমপক্ষে ৩৪ জন কাউন্সিলর হয়েছিলেন এবং ডেলিগেটও হয়েছেন অনেকে৷ বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। জামায়াতের এরকম প্রকাশ্য তৎপরতা না থাকলেও লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মসজিদ কেন্দ্রিক তৎপরতা আছে। তাদের সদস্য ও সমর্থকরা দলের সমর্থক বৃদ্ধি করা ও ফান্ড রাইজিংয়ে বেশী মনযোগী। এটা কানাডায়ও লক্ষ্য করেছি।
এর বাহিরে বিদেশ শাখার সরকার দলের নেতাদের দুতাবাসে প্রভাব বিস্তার করা অন্যতম কাজ। দুতাবাসে সরকারী অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত না জানালে লংকাকান্ড বাধিয়ে দেন। পাসপোর্ট নবায়ন, ন্যাশনাল আইডিকার্ড, জন্মসনদ থেকে শুরু করে নানান কাজে দুতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার, প্রভাব বিস্তার করাসহ এহেন কোন কাজ নেই যা তারা করেন না। পৃথিবীর সব দেশে থাকা বাংলাদেশ দুতাবাসের রাস্ট্রদুত ও কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের এই অত্যাচারের ভুক্তভোগী।
শুরু করেছিলাম জেএফকের ঘটনা দিয়ে। শেষ করছি বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বহীনতা প্রসঙ্গ দিয়ে।
আচ্ছা, ড.ইউনুস বা সরকার কি জানতেন না দেশ-বিদেশে সর্বত্র জুলাই গণভ্যুত্থানে জড়িত নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে?
এর আগে উপদেস্টা আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিমানবন্দরে, প্যারিসে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, নিউইয়র্ক ও লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অপদস্থ হয়েছেন আওয়ামী লীগের উগ্র কর্মীদের দ্বারা।
এ থেকে তারা কি কোন শিক্ষা নিয়েছে?
বিদেশে বারবার একই ঘটনা সংঘটিত হওয়া স্বত্ত্বেও এবারের সফরের আগে কেন সরকার জুলাই গণভ্যুত্থানের নায়কদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেন না?
এর দায় অর্ন্তবর্তী সরকার এড়াতে পারেন না। স্থানীয় দুতাবাস কেন প্রয়োজনীয় প্রটোকল নিশ্চিত করার বিষয়টি অনুভব করলেন না? এরা কি ভুলে গিয়েছে মাত্র কিছুদিন আগে উপদেস্টা মাহফুজের জন্য নিউইয়র্কে কনস্যুলেট অফিসে আওয়ামী লীগ আক্রমন করেছে,ভাংচুর করেছে?
আখতারের সাথে যা হয়েছে, এই ঘটনার জন্য অর্ন্তবর্তী সরকার, স্থানীয় দুতাবাসের কর্মকর্তারা নিরাপত্তা বিষয়ে অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না।
লেখক: গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)
২৩৭ বার পড়া হয়েছে