সেবা না পেলে ট্যাক্স দিতে মানুষ উৎসাহী হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশে কর (ট্যাক্স) প্রদানকারীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, "বাইরের দেশে মানুষ বেশি ট্যাক্স দেয়, কিন্তু তারা সে অনুযায়ী সেবা পায়। অথচ আমাদের দেশে মানুষ ট্যাক্স দিলেও সেবা পায় না, তাই তারা একটু গোসা করবেই।"
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) যৌথভাবে আয়োজিত সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। সেমিনারের শিরোনাম ছিল— “বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামি মানি মার্কেট উন্নয়ন”।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের দেশে রাজস্ব আয় অত্যন্ত কম। ট্যাক্স ও নন-ট্যাক্স আয়ের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। অথচ আমাদের চাহিদা অনেক। প্রতিদিনই বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের দাবি আসে। কিন্তু টাকা কোথায়?”
তিনি জানান, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সম্ভব হচ্ছে না, যা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ভাষায়, "ট্যাক্স কমাতে কমাতে এমন অবস্থা হবে যে আমরা হয়তো বেতন-ভাতাও ঠিকমতো দিতে পারব না। সবাই শুধু কম ট্যাক্স দিতে চায়, অথচ সেবা প্রত্যাশা করে।"
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “আমরা শিক্ষকদের দোষ দেই—পড়ায় না। কিন্তু এই সামান্য মাইনে দিয়ে তারা কীভাবে মনোযোগ দিয়ে কাজ করবেন? আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.২ শতাংশ, যেখানে ব্রাজিলে এই অনুপাত ২৬ শতাংশ। তারা ট্যাক্স দেয় এবং সেবাও পায়।”
এসময় তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা সেবা ভালো দিন, তাহলে মানুষ ট্যাক্স দিতেও আগ্রহী হবে। ট্যাক্স দেবে, আবার দশবার ঘুরতে হবে—এটা তো চলবে না।”
সেমিনারে তিনি দেশের আর্থিক খাতের অতিমাত্রায় ব্যাংকনির্ভরতার সমালোচনা করেন। তার মতে, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতই ব্যাংক ঋণের ওপর ভরসা করে, অথচ অনেক সময় সেই ঋণ ফেরত না দিয়েই পার পেয়ে যায়। বিষয়টিকে ‘বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“একটি কার্যকর পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেট থাকলে ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়া সম্ভব। শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে,” বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
সেমিনারে ইসলামি অর্থনৈতিক যন্ত্র ‘সুকুক বন্ড’-এর প্রসারে জোর দেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের সুকুক ইস্যু হয়েছে, যার প্রায় সবই সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ বেসরকারি খাতও এটি ব্যবহার করে অবকাঠামো ও ব্যবসায়িক খাতে অর্থায়ন করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশাল অবকাঠামো প্রকল্প যেমন এমআরটি বাস্তবায়নে সিকিউরিটাইজেশন দরকার, যাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সহজ হয়।”
ছোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে ভুল ধারণা দূর করতে বিএসইসি ও ডিএসইকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলেন অর্থ উপদেষ্টা। “অনেকে মনে করেন শেয়ারে বিনিয়োগ করলেই লাভ নিশ্চিত। অথচ এটা ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র। এই সচেতনতা জরুরি,” বলেন তিনি।
১০৬ বার পড়া হয়েছে