ব্রিটিশ এমপি, বাংলাদেশের এনআইডি ও পাসপোর্ট

বৃহস্পতিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১:১৮ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
লন্ডনে বসবাসরত লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী—বাংলাদেশের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি—বৃটিশ গণমাধ্যমের কাছে দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে শুধুমাত্র বৃটিশ নাগরিক হিসাবে দাবি করে এসেছেন।
তবে প্রামাণ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ সরকারের দলিলপত্র বলছে, তিনি এখনো বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ভোটার আইডি ও পাসপোর্টের অধিকারী এবং দেশটিতে সম্পত্তি সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত। এটা নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক
প্রথম আলো ও বৃটিশ দৈনিক “The Times” এর যৌথ অনুসন্ধানে নিশ্চিত করা হয়েছে, টিউলিপ ২০১১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন ‘সুধাসদন, ধানমন্ডি’—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। তার জন্মস্থান NID-এ “ঢাকা” এবং পাসপোর্টে “লন্ডন” উল্লেখ রয়েছে। গত বছর সরকার পতনের পর নির্বাচন কমিশন টিউলিপের NID “লক” করেছে—তবে নাগরিকত্ব ত্যাগের কোন আনুষ্ঠানিক আবেদন নেই, ফলে আইনে তিনি এখনও বাংলাদেশের নাগরিক।
পাসপোর্ট ও বাংলাদেশ সফর
টিউলিপ প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট পান ২০০১ সালে লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে। নবায়ন করে ২০১১-তে ঢাকার আগারগাঁও হতে পাসপোর্ট গ্রহণ করেন; ঠিকানায় উল্লেখ ছিল সুধাসদন, ধানমন্ডি। সে বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় আসেন বাংলাদেশ পাসপোর্ট ব্যবহার করে। ঢাকায় এসে তিনি সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং পানি উন্নয়নসহ সরকারি ফোরামে উপস্থিত ছিলেন।
সম্পত্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর টিউলিপ ও তার পরিবারের নামে চারটি দুর্নীতির মামলা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, আত্মীয়তাজনিত সুবিধা ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ঢাকা ও পূর্বাচলে সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) বলেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ অর্থনৈতিক ও আইনগত তদন্ত চলছে, এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে আদালত তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে।
জনমত ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার” বলে দাবি করেছেন, যদিও Bangladeshi ও UK সরকারের অফিসিয়াল তথ্য-প্রমাণ তার নাগরিকত্ব ও সম্পত্তি গ্রহণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আইনজীবী ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, “আইনগতভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখা সম্ভব হলেও, তথ্য গোপন করলে তা নৈতিক ও আইনি জটিলতা তৈরি করে”।
শেষ কথা
একদিকে টিউলিপ সিদ্দিকীর অহংকারিত ব্রিটিশ পরিচয়, অন্যদিকে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ও দুর্নীতির মামলায় সরকারি দলিল ও অনুসন্ধানের ব্যাকরণে চরম বিতর্ক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণপরিসরে যেমন রহস্যের সৃষ্টি, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা চলছেই।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৩৮ বার পড়া হয়েছে