সর্বশেষ

রাজনীতি

টিউলিপের নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো আবেদন নেই

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বৃহস্পতিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রভাবশালী এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক নিজেকে কেবলমাত্র ব্রিটিশ নাগরিক দাবি করলেও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা।

জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা ও পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের নাগরিক।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।


জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের তথ্য বলছে: তিনি বাংলাদেশি নাগরিক
নির্বাচন কমিশনের এনআইডি তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ২০১১ সালে টিউলিপের নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ইস্যু করা হয়। পরিচয়পত্রে তাঁর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডির সুধা সদন—যেটি তাঁর খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন। একইসঙ্গে ‘মাইগ্রেটেড’ ট্যাগসহ তিনি ধানমন্ডি এলাকাতেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত।

এর আগে, ২০০১ সালে ১৯ বছর বয়সে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে টিউলিপের নামে প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু হয়। পরে ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে দ্বিতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। ওই পাসপোর্টে জন্মস্থান লন্ডন, জাতীয়তা বাংলাদেশি এবং জরুরি যোগাযোগের ঠিকানায় মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের নাম দেওয়া আছে।


সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও ভ্রমণ নথি: ঢাকায় ছিলেন, পাসপোর্টও নিয়েছেন
২০১১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় সরকারি এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ। ওই সময় তাঁর দ্বিতীয় পাসপোর্ট ইস্যু হয় এবং ১৭ জানুয়ারি তা সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত ছিল।

একই বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সরকারি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে নিউইয়র্ক যান টিউলিপ। ২০১৩ সালে তিনি মস্কো সফরেও শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।


আইনি দৃষ্টিভঙ্গি: দ্বৈত নাগরিকত্ব বৈধ, তবে গোপন করাটা প্রশ্নবিদ্ধ
আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ উভয় দেশই দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে। ফলে টিউলিপ একইসঙ্গে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি নাগরিক হতে পারেন।

তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, “আইনি জটিলতা নয়, এখানে প্রশ্নটি হলো সত্য গোপনের। তিনি দ্বৈত নাগরিক হতে পারেন, কিন্তু তা অস্বীকার করে অসত্য বলছেন, যা একজন জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।”


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে: নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো আবেদন নেই
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন—এমন কোনো রেকর্ড নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা জানিয়েছে, এ বিষয়ে টিউলিপ কোনো আবেদন করেননি।


টিউলিপের পক্ষে বক্তব্য: ‘জাল নথি ও রাজনৈতিক অপপ্রচার’
এই ইস্যুতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও টিউলিপ বা তাঁর আইনি প্রতিনিধিরা কোনো মন্তব্য দেননি। তবে দ্য টাইমস–কে দেওয়া এক বিবৃতিতে তাঁর মুখপাত্র বলেছেন, “টিউলিপ সিদ্দিক কখনো বাংলাদেশি এনআইডি বা পাসপোর্ট পাননি। শৈশবের পর থেকে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও রাখেননি।” এই অভিযোগকে তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব নথির তথ্য যাচাই করে তাদের সত্যতাও নিশ্চিত করা হয়েছে।


ঠিকানায় রয়েছে ভিন্নতা, এনআইডিতে জন্মস্থান ঢাকা, পাসপোর্টে লন্ডন
টিউলিপের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে কিছু ভিন্ন তথ্য রয়েছে। যেমন এনআইডিতে তাঁর জন্মস্থান লেখা হয়েছে ‘ঢাকা’, কিন্তু পাসপোর্টে ‘লন্ডন’। আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের গরমিল প্রভাবশালী অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে, তবে এটি তথ্য গোপনের ইঙ্গিতও দিতে পারে।


দুদকের অনুসন্ধান ও মামলা
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টিউলিপের বিরুদ্ধেও চারটি দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। দুদক বলছে, তাঁর নামে থাকা এনআইডি ও পাসপোর্টের ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও পাঠানো হয়েছে।


টিউলিপের পদত্যাগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। গত আগস্টে তিনি গার্ডিয়ান–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে তিনি ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার’ হয়েছেন।


দ্বৈত নাগরিকত্ব বিতর্কে আন্তর্জাতিক নজর
টিউলিপ সিদ্দিকের এই দ্বৈত নাগরিকত্বের ইস্যুটি এখন কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়; এটি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। বিশেষ করে একজন এমপি হিসেবে তাঁর সততা, স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।


আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখা অপরাধ না হলেও, তা অস্বীকার করা ও তথ্য গোপন করা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। টিউলিপ সিদ্দিকের ক্ষেত্রে সেই প্রশ্ন এখন অনেক গভীর এবং রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে—দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় প্রেক্ষাপটে।

১২০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
রাজনীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন