স্মৃতিচারণ: ফরিদা পারভীন

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:৫০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
স্মৃতিতে ফরিদা পারভীন।
লালন সম্রাজ্ঞী কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন গত রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন, বলা যায় সারা দেশকে কাঁদিয়ে।
পদ্মা গড়াই বিধৌত আউল বাউল,লালনের দেশ কুষ্টিয়ায় তাঁর বেড়ে ওঠা এবং কীর্তি প্রতিষ্ঠা।
আমাদের স্কুল জীবনে তাকে প্রথম গান গাইতে দেখি কুমারখালীর কোন অনুষ্ঠানে। পরবর্তীকালে এক স্মৃতিচারণে তিনি আমার কাছে বলেছিলেন কুমারখালীতে তিনি প্রথম পুরস্কার পান জীবনে। সেই স্মৃতি তিনি বুকে লালন করতেন সর্বদাই।
কুষ্টিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পরবর্তীকালে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজ নামে তিনি বিখ্যাত হলেন। মুস্কন্দ ডুবে তার ক্যাসেট গুলো ভারতে নিয়ে যান এবং সেখানে হিন্দিতে সেগুলো গাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।
প্লেনে একবার পাশে আমি সিট পেয়েছিলাম মুসকন্দ দুবের। তিনি সারাক্ষণই ফরিদা পারভীনের কথা বলছিলেন।
আমার প্রথম কর্মস্থল পাবনাতে একবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। জাফর ভাই টেলিফোনে আমাকে বলেন সবকিছু যেন ভাল হয়। সেখানে ফরিদার এক ফুপা আমার সহকর্মী ছিলেন। ফরিদা তাকে জানিয়েছিলেন ওখানে আমাদের কুষ্টিয়ার আখতার সাহেব আছেন উনাকে সবকিছু বললেই হবে।
অনুষ্ঠান ভালোভাবেই হয়ে যায়। তখনও জাফর ভাইয়ের মধ্যে পরিবর্তন সূচিত হয়নি। জাফর ভাই আমাকে বলেন আরো আশেপাশের জেলায় অনুষ্ঠান করলে ভালো হতো। পরবর্তীকালে বগুড়াতে ও আমি উনাদেরকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।
আমার মনে আছে প্রথম দিকে ফরিদা পারভীন নজরুল গীতি গাইতেন। কুমারখালীর এক অনুষ্ঠানে তিনি একটা গান গাইলেন। মরহুম আবু তৈয়ব পচু বলে উঠলেন ফরিদা এখন কুষ্টিয়ার টপ শিল্পী, তাকে আরো কয়েকটি গাইতে দাও। কথাটা এখনও আমার কানে বাজে।
আমি যখন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ওখানকার প্রধান হলটিতে বড় বড় অনুষ্ঠান হতো। একবার এক অনুষ্ঠানে ফরিদা গাইতে এলেন। তাদের বসানোর জন্য আমার রুমে নিয়ে আসা হলো। আমাকে সেখানে দেখে ফরিদা একটু অবাকই হয়ে গেলেন। তারপর আরো কয়েকবার আমার ওই কক্ষে তিনি গিয়েছেন এবং আমরা নানাভাবে গল্প করেছি।
ফরিদা পারভীন একবার সচিবালয়ে আমার রুমে গিয়েছিলেন। মূলত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে তার কাজ ছিল।
তিনি আমাকে বললেন আপনার সঙ্গে দেখা করলে আমার সেই কাজটা হয়ে যাবে সেজন্য সরাসরি এখানে এসেছি। আমি তাকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে যাই এবং তার সেই কাজটা শেষ করি।
বলা যায় ফরিদা পারভীন লালন কে বাঁচিয়ে রেখেছেন বছরের পরে বছর। ফরিদা পারভীনের কন্ঠে লালন সংগীত লালনের পরিচয় বহন করে। আরো অনেকে লালনের গান করেন কিন্তু ফরিদা ছিলেন ব্যতিক্রম। তাকে হারিয়ে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এক অপুরনীয় ক্ষতির মুখোমুখি হল।
আমরা হারালাম আমাদের এক আপন জনকে। এই ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়।
আরো নানা স্থানে নানাভাবে ফরিদা পারভীনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মৃদু হাসি বিনিময় হয়েছে।
লালনের গানের যে ঐতিহ্য তিনি তৈরি করে দিয়ে গেলেন তা বহুদিন টিকে থাকবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য যেসব আধুনিক গান সেগুলিও। ওপারে ভালো থাকুন ফরিদা পারভীন।
লেখক: কাজী আখতার হোসেন, সাবেক সচিব
(লেখাটি তাঁর ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
১২২ বার পড়া হয়েছে