নওগাঁয় কারাম উৎসবে নৃত্যগীতের বর্ণিল আয়োজন

বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৪০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢোল, মাদল আর করতালের তালে তালে নাচে-গানে মুখর হয়ে উঠেছিল নওগাঁর মহাদেবপুর।
বর্ণিল সাজে, পায়ে আলতা, খোপায় বাহারি ফুল আর শাড়ির রঙে রাঙিয়ে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ উদযাপন করলেন তাদের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নওগাঁ জেলা কমিটির উদ্যোগে মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। আয়োজন ঘিরে ছিল দুই দিনব্যাপী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান
উৎসবের সূচনা ঘটে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে, উপজেলার নাটশাল, বকাপুর, জৈন্তাপুর, ঋষিপাড়াসহ আশপাশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের মাধ্যমে। সেদিন নারী-পুরুষ উপোস থেকে সন্ধ্যার আগে যুবকেরা কারাম বা খিল কদম গাছের ডাল কেটে পূজার বেদিতে স্থাপন করেন। পূজার মূল অংশে নারীরা শস্যবীজ, ফলমূল, লাল মোরগ ও দিয়া বাতি উৎসর্গ করেন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে।
রাত গভীর হলে পূজাস্থলে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পুরোহিতের কণ্ঠে শোনা যায় কার্মা ও ধার্মা—এই দুই ভাইয়ের কাহিনি। কিচ্ছা বলা শেষে উপোস ভেঙে শুরু হয় ঢাক-ঢোলের তালে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। নারীরা বেদির চারপাশ ঘুরে নাচে অংশ নেন। পরদিন সকালে পূজা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় কারাম ডাল।
সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় মূল সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাবেশ। এতে মহাদেবপুর ছাড়াও পত্নীতলা, নিয়ামতপুর ও জেলার বাইরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত প্রায় ৫০টি সাংস্কৃতিক দল অংশ নেয়। তারা ঢোল, মাদল ও করতালের তালে নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও গান পরিবেশন করে।
সমাবেশের উদ্বোধন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডি। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, আইএসসি’র সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী, নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাত, নওগাঁ জেলা কমিটির উপদেষ্টা আজাদুল ইসলাম এবং পত্নীতলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালক যোগেন্দ্রনাথ সরকার।
ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে উদযাপিত কারাম উৎসব সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। ধান রোপণের পরের অবসর সময়কে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই বৃক্ষপূজার উৎসবটি মূলত অভাবমুক্তি, সৌভাগ্য ও ফসলের প্রাচুর্য কামনায় পালিত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে এই উৎসব ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আদিবাসী সম্মেলনের আয়োজন হয়ে আসছে।
এই উৎসব শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, বরং নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচয়কে রক্ষা ও প্রচারের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে চলেছে।
১০৮ বার পড়া হয়েছে