আজ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৪:২৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ ৬ সেপ্টেম্বর, উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯৭২ সালের এই দিনে ভারতের মধ্যপ্রদেশের মাইহারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিশ্ববরেণ্য শিল্পী। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ইতিহাসে এক অনন্য নাম আলাউদ্দিন খাঁ। সংগীতজগতে তিনি পরিচিত ছিলেন “মাইহার ঘরানা”র প্রবর্তক হিসেবে, যা পরবর্তীতে তাঁর নামেই পরিচিতি পায়—“আলাউদ্দিন ঘরানা”।
১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার (বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার) শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সংগীতানুরাগী পরিবারে বেড়ে ওঠা আলাউদ্দিন খাঁ’র পিতা সদু খাঁ ছিলেন একজন খ্যাতিমান সেতার বাদক। তাঁর সুরের ঝংকারেই সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন ছোট্ট আলাউদ্দিন।
শৈশবে লেখাপড়ায় মন না বসায় মাত্র ১০-১২ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে সংগীত সাধনার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান কলকাতায়। এরপর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন বহু খ্যাতিমান ওস্তাদের কাছ থেকে—যেমন নুলো গোপাল, আহমদ আলী খাঁ ও ওয়াজীর খাঁ। তিনি শুধু সরোদেই নয়, প্রায় সব ভারতীয় ও পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন পারদর্শী। তাঁর হাতে রচিত বহু নতুন রাগরাগিণী যেমন—হেমন্ত, হেম বেহাগ, বসন্ত বেহাগ, প্রভাতকেলী—আজও সংগীতমহলে শ্রদ্ধার সঙ্গে চর্চিত।
সংগীত সাধনার দীর্ঘ যাত্রায় তিনি পাটনা, কাশী, রামপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ নানা স্থানে সংগীত পরিবেশন করেছেন। পরবর্তীতে মধ্যপ্রদেশের মাইহার রাজদরবারে প্রধান দরবারি সংগীতজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পান। এখানেই গড়ে তোলেন নিজের সংগীত বিদ্যালয় ও তৈরি করেন বিখ্যাত "মদিনা ভবন", যেখানে তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অবস্থান ছিল।
১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি বিশ্ব সংগীত সফরে বের হন এবং ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের বার্তা পৌঁছে দেন। ১৯৩৬ সালে তিনি হজ পালন করেন।
তাঁর অসামান্য সংগীতসাধনার জন্য তিনি পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি ও সম্মাননা। ভারত সরকার তাঁকে দিয়েছে পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ। এছাড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দেয় ‘দেশিকোত্তম’ খেতাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডক্টর অব ল এবং বিভিন্ন হলের আজীবন সদস্যপদ। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সম্মানিত করে “খাঁ সাহেব” উপাধিতে।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, শিক্ষক, রাগ স্রষ্টা এবং এক মানবিক হৃদয়ের মানুষ। তিনি শিবপুর গ্রামে পুকুর খনন ও একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন গ্রামের মানুষের অনুরোধে। তাঁর কন্যা অন্নপূর্ণা দেবী ছিলেন একজন খ্যাতিমান সুরকার, যিনি পরবর্তীতে বিয়ে করেন পণ্ডিত রবিশংকরকে—ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’রই অন্যতম শিষ্য।
আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে সংগীতপ্রেমীরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন এই মহৎ পুরুষকে, যিনি সংগীতকে করেছিলেন সাধনার অন্যতম উচ্চশিখরে প্রতিষ্ঠিত।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-কে নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য:
জন্ম: ৮ অক্টোবর ১৮৬২, শিবপুর, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, মাইহার, মধ্যপ্রদেশ, ভারত
প্রবর্তিত ঘরানা: মাইহার বা আলাউদ্দিন ঘরানা
বিশেষ রাগ সৃষ্টিকারী: হেমন্ত, হেম বেহাগ, বসন্ত বেহাগ, প্রভাতকেলী
প্রধান শিষ্য: পণ্ডিত রবিশংকর, আলী আকবর খাঁ, অন্নপূর্ণা দেবী প্রমুখ
পুরস্কার ও সম্মাননা: পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দেশিকোত্তম, ডক্টরেট ডিগ্রি (ঢাকা ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়)।
১০৭ বার পড়া হয়েছে