দুদকে অভিযোগের পাহাড়, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ওয়ারেস উল মতিনকে ঘিরে বিতর্ক

শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৯:০৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংকের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং স্বচ্ছতা বিঘ্নিত করার নানা অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো সাবেক কর্মকর্তার নাম ওয়ারেস উল মতিন।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যানুযায়ী, ওয়ারেস উল মতিন ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছেন। তিনি একদিকে সাবেক নৌবাহিনী লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হিসেবে পরিচিত, অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নসহ নানা অভিযোগ উঠলেও, সিন্ডিকেটের সঙ্গী হওয়ার কারণে কখনোই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়ারেস উল মতিনের নেতৃত্বে ব্যাংকের অর্থ পাচার, অস্তিত্ববিহীন যোগানদারদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিএসআর খরচ পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা থাইল্যান্ডে পাঠানোর সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাবেক এস এস এফ প্রধান মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। এর ফলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নথিপত্রের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস বা নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু অংশ উদ্ধার হলেও, পুরো বিষয়ের তদন্তের জন্য ফরেনসিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অস্বচ্ছতা দেখা গেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অখাদ্য নিয়োগের মাধ্যমে শত শত লোকজন ব্যাংকে যোগদান করেছেন বলে অভিযোগ, যা বেআইনি অর্থ লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর ফলে সরকারের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ সমঝোতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে ওয়ারেস উল মতিন বিভিন্ন সময় ব্যাংকের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। এ ছাড়া, এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে ১৫ কোটি টাকার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, যা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই সম্পন্ন হয়। এই বিনিয়োগে ব্যাংকের ৮.৫৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
সিএসআর বাজেটের অপব্যবহারের অভিযোগও উঠে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, মেট্রোরেল উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস ও বিজয় দিবসের বিজ্ঞাপনের জন্য ২১.৯১ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও, বাস্তবায়নে কোনও কার্যক্রম হয়নি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা দুর্বৃত্তের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অনৈতিকভাবে নথিপত্র স্বাক্ষর করেছেন। পাশাপাশি, ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে অস্ত্র বহন করতেন, যা ব্যাংকের নিরাপত্তা ও মানসিক পরিবেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে যথাযথ জবাব না পাওয়া গেলেও, অভিযোগের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে, পদত্যাগের আগে গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে, পুরো বিষয়ের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ফরেনসিক বিশ্লেষণের বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুর্নীতির এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর, ওয়ারেস উল মতিনসহ সংশ্লিষ্টরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও, এর ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাংকের সুনাম ও স্বচ্ছতায় পড়েছে।
উপসংহারে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির এই জাল দ্রুত ও স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে, সাউথইস্ট ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২৬০ বার পড়া হয়েছে