নিজ দেশে ফিরতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চায় রোহিঙ্গারা

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ২:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নিজ দেশ মিয়ানমারে নিপীড়ন ও সহিংসতার মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’।
শনিবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে অন্তত ১৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানববন্ধন, মিছিল ও পথসভার মাধ্যমে দিনটি স্মরণ করেন তারা।
উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্পের একটি খেলার মাঠে আয়োজিত প্রধান সমাবেশে অংশ নেন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে তারা তাদের দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেন— যার মধ্যে ছিল রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসন, সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও সম্পত্তির নিশ্চয়তা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। ওই ঘটনায় হাজারো রোহিঙ্গা নিহত হন, নারী ও শিশুরা ধর্ষণের শিকার হন এবং লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। ২০২২ সাল থেকে দিনটিকে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছেন তারা।
আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর, যিনি বলেন, “এ দিনটি আমাদের জন্য শুধুই শোকের নয়, বিশ্বকে জানানোর একটি উপলক্ষ— আমরা এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি।”
রোহিঙ্গা নেতা হোসেন ইব্রাহিম বলেন, “অসংখ্য রোহিঙ্গা এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, ক্যাম্প-৯’র ডি ব্লক ও বলি বাজার মাঠে আয়োজিত একাধিক পথসভায় উপস্থিত ছিলেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার সাদেক, মৌলভি মোহাম্মদ নূর, হেড মাঝি আবদুল আমিন, ডা. জুবায়ের, রহমত উল্লাহ, আহমেদ, ইউসুফ, হেলাল (কায়ু মাইং), মৌলভি বনি আমিন ও মুফতি আনিস প্রমুখ।
পরে ইনানী সৈকতের একটি হোটেলে 'রোহিঙ্গা সংলাপ' অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসায় তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শেষ করা হয়।
প্ল্যাকার্ড হাতে অনেক রোহিঙ্গা অংশগ্রহণকারী মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিচার দাবি করেন। নিহত স্বজনদের ছবি নিয়ে অনেকেই সমাবেশে হাজির হন। রাখাইনে প্রাণ হারানোদের স্মরণে মোনাজাতও করা হয়।
এ বিষয়ে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. সিরাজ আমীন বলেন, “রোহিঙ্গাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “গণহত্যা দিবস পালনে কোনো বাধা ছিল না। রোহিঙ্গারা টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি, যাদের মধ্যে গত ১৮ মাসে নতুন করে এসেছে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার। তবে গত আট বছরে কোনো রোহিঙ্গাকেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
১৩০ বার পড়া হয়েছে