সর্বশেষ

সারাদেশ

হাওরে জলাবদ্ধতা, আমন ধান নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় মৌলভীবাজারের কৃষকরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট, ২০২৫ ৭:২০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রোপা আমন মৌসুমের শেষ দিকে এসেও মৌলভীবাজারের কৃষকরা এখনো অনেক জমিতে ধান রোপণ করতে পারেননি। জেলার বৃহৎ হাওর কাউয়াদীঘিতে দেখা দিয়েছে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা।

এতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে অনেক আবাদি জমি ও বীজতলা। ফলে ফসল হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার বড়কাপন, জগতপুর, রায়পুর, আখাইলকুড়া ও কাশিমপুরসহ হাওরের বিভিন্ন এলাকার কোথাও পানিতে ডুবে আছে বীজতলা, আবার কোথাও তলিয়ে গেছে রোপণ করা জমির ফসল।

জগতপুর গ্রামের কৃষক মোত্তালিব মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রত্যেক বছর এই জলাবদ্ধতা আমাগো সর্বনাশ কইরা দ্যায়। এত টাকা পয়সা লগাইয়া এখন সব পানির নিচে। পানি ঠিকমতো সরে না, কইতাম কাকে?’

রায়পুর গ্রামের কৃষক শহীদ বলেন, ‘আমার রোপা আমন শেষ। সব পানিতে নষ্ট হইতেছে। যদি ভাদ্রের মধ্যে পানি না নামে, তবে যা লাগাইছি সবই শেষ হইয়া যাইবো। যেকোনোভাবে পানি নামানোর ব্যবস্থা দরকার।’

বড়কাপন গ্রামের আরেক কৃষক রেজাউল করিম খসরু বলেন, ‘কাশিমপুরে যে ৮টা পাম্প আছে, সব যদি ঠিকমতো চলত, তাহলে ১৯ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে থাকতো না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কাশিমপুর পয়েন্টে স্থাপিত পাম্প হাউজের ৮টি মেশিন ২৪ ঘণ্টা সচল থাকলেও কুশিয়ারা নদীতে পানি নামছে না। ফলে হাওরে পানির স্তর কমছে না। হাওরের নিচু এলাকায় আমন রোপণ করায় জমি ডুবে গেছে বলে দাবি তাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘বর্তমান পাম্প হাউজের সক্ষমতা বর্ষাকালে ছড়ার মাধ্যমে আসা পানির পুরোটা নিষ্কাশনে যথেষ্ট নয়। নিচু জমিতে আমন করতে হলে হাওরের পানির স্তর ৭.৫০ রাখতে হবে। এজন্য নতুন পাম্প হাউজ দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার সময় যদি পানির স্তর কমিয়ে ৭.৫০ রাখা হয়, তাহলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। এজন্য বিস্তারিত সমীক্ষা প্রয়োজন।’

কাউয়াদীঘি হাওরের কৃষকদের দাবি, হাওরের সঙ্গে সংযুক্ত খাল-নালা ও নদীগুলো খননের মাধ্যমে পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পাম্প হাউজ চালু রাখতে হবে বছরব্যাপী।

সদর উপজেলা হাওর রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বীজতলা তৈরি করেও ধান লাগাতে পারছি না। বারবার বললেও কেউ শোনে না। হাওরের খাল খনন না হলে প্রতি বছর এ অবস্থা চলতেই থাকবে।’

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কাশিমপুরের পাম্পগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু থাকায় জলাবদ্ধতা মারাত্মক হবে না বলে আমরা আশাবাদী। এখনো কাউয়াদীঘি হাওরে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হবে বলে ধারণা করছি।’

হাওরের কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর একই ধরনের জলাবদ্ধতা তাদের কৃষিকাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তা থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও খাল-নালা পুনঃখননের পাশাপাশি নতুন পাম্প হাউজ নির্মাণ প্রয়োজন।

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন