আল-জাজিরার সাংবাদিক আল-শরীফসহ পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত

সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫ ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চালানো হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার আরবি বিভাগের সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ (২৮)। একই হামলায় আরও চার সংবাদকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে সাংবাদিকদের অস্থায়ী তাঁবুতে অবস্থানকালে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় মোট সাতজন নিহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
নিহত অন্যান্য সাংবাদিকরা হলেন—আল-জাজিরার সংবাদদাতা মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, এবং সংবাদকর্মী মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া।
আনাস আল-শরীফ ছিলেন গাজার উত্তরের একজন সক্রিয় সাংবাদিক, যিনি ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতির লাইভ আপডেট দিতেন। নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করেছিলেন যে গাজার পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে “ফায়ার বেল্ট” কৌশলে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল।
তাঁর শেষ ভিডিওতে রাতের অন্ধকার আকাশে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র শব্দ ও কমলা আলোর ঝলক দেখা যায়। গাজার পরিস্থিতি তিনি প্রতিদিন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছিলেন।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল আনাস একটি ‘শেষ বার্তা’ লিখে যান, যা মৃত্যুর পর প্রকাশ করা হয়। বার্তায় তিনি বলেন, “আমি কখনো দ্বিধা করিনি সত্য যেমন আছে, তেমনই তুলে ধরতে। আমার একমাত্র আশা ছিল আল্লাহ যেন সাক্ষী থাকেন তাঁদের প্রতি, যাঁরা নীরব থেকেছেন, আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছেন।” তিনি আরও লেখেন, “আমার স্ত্রী বায়ান, ছেলে সালাহ ও মেয়ে শামের মুখ আমি হয়তো আর দেখতে পারব না।”
আল-জাজিরার তীব্র নিন্দা
এক বিবৃতিতে আল-জাজিরা এই হামলাকে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ‘পূর্বপরিকল্পিত ও নগ্ন হামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, “এই হত্যাকাণ্ড গাজায় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বরকে চিরতরে থামিয়ে দিতে চায়।”
সংস্থাটি দাবি করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, কারণ তারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য বিশ্বমাধ্যমে তুলে ধরছিলেন। গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে আল-জাজিরা।
ইসরায়েলের দাবি ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
আনাস আল-শরীফের হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তিনি ‘হামাসের একটি সেলের নেতা’ ছিলেন এবং ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তাদের কাছে ‘নির্ভরযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে।
তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর। সংস্থাটির বিশ্লেষক মুহাম্মদ শেহাদা বলেন, “আনাস শরীফ দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরার সামনে থাকতেন। তাঁর সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো তথ্য প্রমাণ নেই।”
১৪০ বার পড়া হয়েছে