বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সংগ্রাম, অর্জন ও সাফল্য

শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫ ৫:৩৯ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের নারী ফুটবল—বিগত দেড় যুগের নানা বাধা-সংগ্রাম অতিক্রম করে আজ ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল জায়গায় পৌঁছেছে। তাদের সাফল্যের গল্প যেমন অনুপ্রেরণার, তেমনি এখনও রয়ে গেছে বিভিন্ন না-পাওয়ার গল্পও।
ফুটবল মাঠে বাংলার মেয়েরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে, বিশ্বমঞ্চে স্থান পাচ্ছে; সেই সাথে ফুটবলের আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বাংলাদেশ নারী দলের নামটি যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি ফুটबলারদের ব্যক্তিগত সাফল্যও এসেছে নিজেদের পরিশ্রম ও সংগ্রামের মাধ্যমে।
ফিফা Ranking: বাংলাদেশের অবস্থান
সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল বর্তমানে ফিফা Rankingএ ১০৪তম স্থানে আছে। মাত্র এক বছর আগে তারা ১২৮তম স্থানে ছিল—এরপর টানা জয়, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং দক্ষিণ এশীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়, তারা এক লাফে ২৪টি ধাপ এগিয়েছে।
দলের সামনে রয়েছে আফ্রিকার শক্তিশালী দেশ আঙোলা (১০৩তম), আর ঠিক পরে আছে মলাওয়ি (১০৫তম)। দক্ষিণ কোরিয়া, যাদের সাথে ‘এইচ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচ, তারা ফিফা Rankingএ ২১তম স্থানে আছে—এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ শক্তিশালী দল।
তারকা নারী ফুটবলারদের উজ্জ্বলতা
বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে যারা আমূল বদলে দিয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের সাফল্য—
সানজিদা আকতার: দলের মিডফিল্ডের প্রাণ, SAFF উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের নায়ক। তার নেতৃত্বে দল আক্রমণাত্মক ফুটবলে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
শামসুন্নাহার জুনিয়র: তরুণ তারকা, গোল প্লেটফর্মে দেশসেরা। ২০২২ SAFF ফাইনালে গর্জে ওঠা গোল তাকে সুপারস্টার বানায়।
কৃষ্ণা রাণী সরকার: উইঙ্গার হিসেবে অসম্ভব দ্রুতি ও চতুরতা দেখিয়েছেন। তার সেরা মুহূর্ত ২০২৪ SAFF এবং এবারের বাছাইপর্বে গুরুত্বপূর্ণ গোল করে বাংলাদেশকে খেলা জিতিয়েছেন।
রুপনা চাকমা: গোলরক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের অবিচল ভরসা। বারবার অবিশ্বাস্য সেভ করে জাতীয় দলের ম্যাচ-বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া মৌসুমী আক্তার, তহুরা খাতুন—যারা যুব পর্যায় থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক আসরে গোল ও জয় এনে দিয়েছেন, তাদের অবদানও অনবদ্য। এসব ফুটবলারদের অনেকেই আজ একাধিক দেশের ক্লাবে খেলছেন, দেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের আইকন হয়ে উঠেছেন।
সংগ্রাম আর না-পাওয়ার বাস্তবতা
নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রা স্বপ্নময় হলেও, তাদের আয় এখনও পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। ক্লাব ও ফেডারেশন থেকে বিনিয়োগ ও স্পনসরশিপের ঘাটতি রয়ে গেছে। ক্যাম্পে সুযোগ-সুবিধা, মনোবৈকল্য ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই আজও বিদ্যমান।
যোগ্যতার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও নেতৃত্ব, গণমাধ্যম প্রচার ও সামাজিক স্বীকৃতি তুলনামূলক কম পেয়েছেন তারা। এ বছর কোচিং ক্যাম্পে ‘বডি শেমিং’–এর মতো ঘটনা এবং মানসিক হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ আসায় দল ভেতরেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। তা-সত্ত্বেও, জাতীয় ফেডারেশন নারীদের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তি, নগদ পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক লিগে খেলার সুযোগ বাড়ানোর প্রয়াস নিয়েছে।
নির্ধারক ম্যাচের প্রত্যাশা: ‘এইচ’ গ্রুপে বাংলাদেশ
অনূর্ধ্ব-২০ এএফসি নারী এশিয়ান কাপের ‘এইচ’ গ্রুপে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া এখন সমান পয়েন্ট ও গোল পার্থক্য নিয়ে শীর্ষে। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের নারী দল দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে—লাওস ও তিমুর-লেস্তে-কে বড় ব্যবধানে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস পেয়েছে।
আজকের (১০ আগস্ট) শেষ ম্যাচটি হয়ে উঠবে আসল পরীক্ষা; কারণ জয় বা ড্র পেলেই তারা সরাসরি মূলপর্বে চলে যাবে। হারলেও ‘সেরা রানার্স-আপ’ হিসেবেও দ্বিতীয় সুযোগ থাকতে পারে। বাংলাদেশের আক্রমণভাগ, দারুণ প্রশিক্ষিত গোলরক্ষক এবং জেদি মিডফিল্ডারদল এখন সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে মাঠে নামবে।
দক্ষিণ কোরিয়া শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও, বাংলাদেশের মেয়েরা SAFF এবং আন্তর্জাতিক বাছাইপর্বে গোলের ঝড় তুলেছে—কৃষ্ণা, মৌসুমী, রুপনারা জ্বলে উঠেছেন।
ফিফা Rankingএ ১০৪তম দল হিসেবে, ২১তম Rankingএ থাকা দক্ষিণ কোরিয়াকে চ্যালেঞ্জ করা অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত—তবু, প্রতিটি মেয়ে এখন নিজেদের ‘ফাইটার’ মনে করে এবং ইতিহাস গড়তে প্রস্তুত।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৫৬ বার পড়া হয়েছে