তীব্র প্রতিরোধের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সারকারের পতনের দিন আজ

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫ ৬:০০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ ঐতিহাসিক দিন, যখন ছাত্র-জনতার অসাধারণ আত্মত্যাগ এবং তীব্র প্রতিরোধের মুখে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করে, এদিনের গণঅভ্যুত্থান ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
৫ আগস্ট সকালে ঢাকার শাহবাগের অভিমুখে হাজারো ছাত্র-জনতা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামে। কারফিউ ও অবরোধের মধ্যেও তাদের দৃঢ় সংকল্প ছিল শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির। তারা বলপ্রয়োগের মুখোমুখি হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে, যার ফলে বহু মানুষ হতাহত হন। এই দিনটি বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন বিজয়ের দিন, অন্যদিকে তা পরিণত হয় শোকের গভীর অশ্রুতে।
বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও জাতীয় সংসদে প্রবেশ করে দীর্ঘদিনের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসান উদযাপন করে। শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেন, কিন্তু জনতার অসীম সাহস ও প্রতিরোধের সামনে তার অসহায়তা নির্মমভাবে উন্মোচন হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করে দেশজুড়ে উল্লাসের ঝড় বইয়ে দেয়।
শেখ হাসিনা, যিনি দীর্ঘকাল ধরে বলেছিলেন ‘শেখ হাসিনা পালায় না’, আজ তার সেই কথার মিথ্যা প্রমাণ হয়। ৫ আগস্টের এই গণঅভ্যুত্থানে তিনি বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামরিক হেলিকপ্টার করে ভারতীয় সীমান্তের দিকে রওনা দেন, যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন ভারতের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাতে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনা ‘নিরঙ্কুশ ক্ষমতা’ ধরে রাখতে বিভিন্ন অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণে লিপ্ত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে, সরকার তা দমন করতে ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়ন চালায়। ২০২৪ সালে হাইকোর্টের কোটা পুনর্বহালের রায় ও তার পরের তীব্র আন্দোলন দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয় এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। আন্দোলনের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়, যা দেশের পরিস্থিতিকে রক্তাক্ত এক প্রান্তরে পরিণত করে।
৫ আগস্টের এই ঐতিহাসিক দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। লাখ লাখ মানুষ শাহবাগের রাজপথে জড়ো হয়, পুলিশ ও সেনা বাহিনীর বাধা অতিক্রম করে ঢাকায় প্রবেশ করে। এই দিনটি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, স্বৈরশাসনের অবসান এবং জনগণের বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে, দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা আবার জেগে ওঠে।
১১২ বার পড়া হয়েছে