চাকরির পরিসংখ্যান ঘিরে বিতর্ক: দপ্তর প্রধানকে বরখাস্তের নির্দেশ ট্রাম্পের

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫ ৭:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তরের কমিশনার এরিকা ম্যাকএনটারফারকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার ট্রাম্প এ নির্দেশ দেন, যদিও এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ম্যাকএনটারফার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চাকরির সংখ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেখিয়েছেন, যাতে রিপাবলিকানদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনে সুবিধা হয়। তবে প্রেসিডেন্ট এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। এছাড়া মে ও জুন মাসের চাকরির পরিসংখ্যানে বড় ধরনের সংশোধন এসেছে—মে মাসের সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৯ হাজারে, এবং জুন মাসের সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার থেকে নেমে এসেছে ১৪ হাজারে।
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' একাধিক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “আমাকে ও রিপাবলিকানদের খারাপ দেখানোর জন্য এই সংখ্যাগুলো বিকৃত করা হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, ম্যাকএনটারফার বাইডেন প্রশাসনের সময় চাকরির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখিয়েছিলেন, আর এখন ইচ্ছাকৃতভাবে তা কমিয়ে দেখাচ্ছেন।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংখ্যাগুলো পরিসংখ্যানগত সংশোধনেরই অংশ, যা প্রায়ই দেখা যায় এবং তা জালিয়াতির প্রমাণ নয়। নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদার লং বলেন, “এই প্রতিবেদন একটি গেমচেঞ্জার। শ্রমবাজার দ্রুত দুর্বল হচ্ছে।” তিনি জানান, জুলাই মাসে সৃষ্ট নতুন চাকরির ৭৫ শতাংশই এসেছে স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে।
এদিকে জুলাইয়ে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.২ শতাংশে, যা করোনা মহামারির পর সর্বোচ্চ। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর সুদের হার কমানোর চাপ বেড়েছে। ফেডের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার মন্তব্য করেন, “শুল্কজনিত মূল্যস্ফীতি সাময়িক। এখনই পদক্ষেপ না নিলে শ্রমবাজার আরও খারাপ হতে পারে।”
অর্থনীতিবিদরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। সাবেক শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তরের প্রধান উইলিয়াম বিচ বলেন, “এ ধরনের পদক্ষেপ দপ্তরের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।” ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিকস (NABE) জানায়, “বড় সংশোধন মানেই জালিয়াতি নয়; বরং এটি দীর্ঘদিনের বাজেট সংকটের প্রতিফলন।”
সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামার্স বলেন, “সংখ্যা কারও পছন্দ না হলেই একজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাজ। গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া কাম্য নয়।”
১১৯ বার পড়া হয়েছে