বিশ্বের শক্তিশালী ও দুর্বল পাসপোর্ট: এরিত্রিয়া ও ফিলিস্তিনের সাথে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ ৭:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দুর্বল পাসপোর্ট নিয়ে ২২ জুলাই ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, চলতি বছরে সিঙ্গাপুর প্রথম অবস্থানে রয়েছে—এই দেশের নাগরিকরা বিশ্বের ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পান।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, প্রতিটি দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৯০টি দেশে সহজে যেতে পারেন। তৃতীয় অবস্থানটি যৌথভাবে দখল করেছে সাতটি ইউরোপীয় দেশ—ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন; প্রত্যেকে ১৮৯টি দেশে ভিসা ফ্রি বা অন-অ্যারাইভাল সুবিধা উপভোগ করে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল ও সুইডেন, এদের নাগরিকরা ১৮৮টি দেশে এই সুবিধা পান। পঞ্চম অবস্থানে আছে গ্রীস, নিউজিল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড—প্রত্যেকে ১৮৭টি দেশে যেতে পারেন ভিসা ছাড়া।
ষষ্ঠ থেকে দশম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য (ষষ্ঠ—১৮৬), অস্ট্রেলিয়া, চেকিয়া, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড (সপ্তম—১৮৫), কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এস্তোনিয়া (অষ্টম—১৮৪), ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া (নবম—১৮৩), এবং শেষ দশম অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র (১৮২টি দেশ)।
সবচেয়ে দুর্বল দশটি পাসপোর্টের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, যার অবস্থান ১০২তম। দেশের নাগরিকরা বিশ্বের মাত্র ২৫টি দেশে যেতে পারেন ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভালে। এরপর আছে সিরিয়া (১০১তম—২৭ দেশ), ইরাক (১০০তম—৩০ দেশ), পাকিস্তান, সোমালিয়া ও ইয়েমেন (৯৯তম—৩২ দেশ), লিবিয়া ও নেপাল (৯৮তম—৩৮ দেশ), এবং বাংলাদেশ, এরিত্রিয়া ও ফিলিস্তিন যৌথভাবে ৯৭তম অবস্থানে রয়েছে—এদের নাগরিকরা ৪০টি দেশে যেতে পারেন সহজভ্রমণ সুবিধাসহ।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মালদ্বীপ সবচেয়ে উপরে অবস্থান করছে—৫১তম, এর নাগরিকরা বিশ্বের ৯৪টি দেশে ভিসা ছাড়া যাতায়াত করতে পারেন। এরপর ভারত আছে ৮১তম অবস্থানে, নাগরিকরা ৫৯টি দেশে সুবিধা পান। এরপর রয়েছে ভুটান (৮৬তম—৫২টি দেশ), শ্রীলঙ্কা (৯২তম—৪৪টি), বাংলাদেশ (৯৭তম—৪০টি), নেপাল (৯৮তম—৩৮টি), পাকিস্তান (৯৯তম—৩২টি) এবং সবার নিচে আফগানিস্তান (১০২তম—২৫টি দেশ)।
এই অবস্থান প্রতিবছর কিছুটা করে পরিবর্তিত হয় কূটনৈতিক চুক্তি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা পরিবেশ ও বৈদেশিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। যেসব দেশ উপরের দিকে রয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকে এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উন্মুক্ত ট্র্যাভেল চুক্তি করে। এর ফলে তাদের নাগরিকদের বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সহজে যাতায়াত সুবিধা থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, উন্নত এশীয় দেশ ও উত্তর আমেরিকার পাসপোর্ট সাধারণত এই সুবিধার শীর্ষে থাকে।
বাংলাদেশ ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৭তম অবস্থানে রয়েছে, যেখানে দেশটির নাগরিকদের ৪০টি দেশের জন্য ভিসা ছাড়াই বা অন-অ্যারাইভাল সুবিধা দেওয়া হয়। পূর্বের বছরগুলোতে বাংলাদেশ ছিল আরও নিচে—২০২১ সালে ১০৮তম, এরপর ২০২২-এ ১০৩তম, ২০২৩-এ ১০১তম, এবং ২০২৪ সালে ৯৬তম অবস্থানে ছিল। অর্থাৎ, সূচকে বাংলাদেশের সামান্য অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু এখনও এটি বেশ দুর্বল পাসপোর্টের তালিকায় রয়ে গেছে। এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে ধরা হয় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাজনিত নানা বিধিনিষেধ, অভিবাসন সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং দুর্বল কূটনীতি। এসব কারণেই বহু দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসার ক্ষেত্রে এখনো কড়াকড়ি বহাল রয়েছে।
সবমিলিয়ে গ্লোবাল পাসপোর্ট মোবেলিটি ইনডেক্স শুধু একটি তালিকা নয়, বরং এটি একটি দেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য এটি নিছক অবস্থানের ব্যাপার নয়; বরং এটি নির্দেশ করে কতটা স্বাধীনভাবে একজন নাগরিক বিশ্বে চলাফেরা করতে পারছেন, কী ধরনের ভ্রমণ, শিক্ষা বা কর্মসংস্থান সুবিধা তাদের জন্য উন্মুক্ত আছে। কূটনৈতিক তৎপরতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতি ছাড়া এই সূচকে উন্নতি সম্ভব নয় এবং সেটিই বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১৬১ বার পড়া হয়েছে