বাংলাদেশে এআই অপব্যবহার: সতর্ক না হলে পরিণতি ভয়াবহ

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ ৬:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে জেনারেটিভ এআই–নির্ভর ভুয়া তথ্য ও অর্ধসত্য কনটেন্ট। কখনো রোমাঞ্চকর ভিডিও, কখনো আবেগপ্রবণ বক্তব্য—সবই তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে না আনলে সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ পরিণতি।
ভিডিও দেখে মনে হতে পারে বাস্তবে ঘটে যাওয়া কোনো বিপর্যয়—নদীতে ভেঙে পড়া বসতভিটা বা দুর্ঘটনার দৃশ্য। কিন্তু পরে বোঝা যায়, এসবের কিছুই সত্য নয়। অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্য কিন্তু বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট।
সম্প্রতি আলোচিত ‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি’কেও কেন্দ্র করে দেখা গেছে, মৃত ব্যক্তিকে ভিডিওতে জীবিত দেখানো হয়েছে, তার কণ্ঠে শোনা গেছে নতুন কথা। নিখুঁতভাবে তৈরি এসব ভিডিও ও ছবি প্রথম দর্শনেই অনেককে বিশ্বাস করিয়ে দিচ্ছে মিথ্যা তথ্য।
অনেকে মনে করেন, সাধারণ মানুষ এ ধরনের ভিডিও বিশ্বাস করে না। কিন্তু মন্তব্যের ঘরে চোখ রাখলেই বোঝা যায় বাস্তবতা ভিন্ন। দক্ষ সম্পাদনা আর কৌশলী উপস্থাপনায় বিভ্রান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ।
গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. আফতাব হোসেন বলেন, “মিথ্যা বা ভুয়া তথ্য ছড়াতে সময় লাগে না। গবেষণায় দেখা গেছে, ভুল তথ্য ছড়ায় সত্যের চেয়ে ছয়গুণ বেশি গতিতে। আর যখন তথ্য সংগ্রহ বা ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তখন ব্যক্তিগত তথ্যও থাকে ঝুঁকিতে।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো স্পর্শকাতর তথ্য যদি উন্মুক্ত হয়ে যায়, তাহলে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে। আমাদের জানতে হবে কী তথ্য এআইকে দেব, আর কোনটা নয়। এআই নীতিমালা ও নৈতিকতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে অনেক বিভ্রান্তি দূর হবে।”
এদিকে দেশের রাজনীতিতেও ঢুকে পড়েছে এআই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এআই কনটেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, “নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক সতর্ক করে বলেন, “স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো ইচ্ছেমতো এআই ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এসব চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা। এরই মাধ্যমে তৈরি হবে প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত।”
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাজান জোহা বলেন, “ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার পর তা কিভাবে ব্যবহার হবে—সেই নিয়ন্ত্রণ আমাদের দেশে এখনও নেই। এমনকি তারা আমাদের সিদ্ধান্তকে ক্লোন পর্যন্ত করতে সক্ষম। এআই এখন এতটাই শক্তিশালী যে তার প্রভাব সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে নাড়িয়ে দিতে পারে।”
তিনি জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইনের আওতায় এআই নিয়ন্ত্রণে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি হচ্ছে, তবে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অগ্রাহ্য করার মতো কিছু নয়—কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না হলে প্রযুক্তির সম্ভাবনা হয়ে উঠতে পারে বড় ধরনের হুমকি। তাই এখনই প্রয়োজন নীতিগত কাঠামো, গবেষণা ও কার্যকর নজরদারি।
১১১ বার পড়া হয়েছে