ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া আলোচনায় বসতে রাজি

রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫ ৫:১১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানি, বাস্তুচ্যুতি ও পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যেই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্কটল্যান্ড সফরে থাকা অবস্থায় দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি—“যুদ্ধ না থামালে বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য।"
রয়টার্স জানায়, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের পর পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়। দুই দেশই শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসতে সম্মত হয় এবং যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তৎক্ষণাৎ উদ্যোগ নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
শনিবার (২৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, থাই ও কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় রাজি হয়েছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, সংঘাত চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ফেসবুকে দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির পক্ষে, তবে কম্বোডিয়ার কাছ থেকেও আন্তরিকতা প্রত্যাশা করছি।”
তবে এখনও পর্যন্ত দুই দেশের বৈঠক কবে কোথায় হবে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। হোয়াইট হাউস, থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, সংঘর্ষ এখনো থামেনি। শনিবারও থাইল্যান্ডের ত্রাট ও কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে নতুন করে গোলাগুলি হয়েছে, যা আগের সংঘর্ষস্থল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। দুই দেশই একে অপরকে দোষারোপ করছে। থাইল্যান্ড বলছে, মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যুর পর থেকেই পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়। এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড দাবি করছে ৭ সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। কম্বোডিয়ার হিসেবে, তাদের নিহত ১৩ জনের মধ্যে ৫ জন সামরিক সদস্য।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সংঘর্ষকে "অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি" বলে উল্লেখ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, সীমান্তে নতুন করে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তাদের সেনারা আহত হয়েছেন। কম্বোডিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, থাইল্যান্ডই আগ্রাসী আচরণ করছে।
ট্রাম্প জানান, তিনি আগস্টের ১ তারিখের মধ্যে দুই দেশের সঙ্গে পৃথক বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। যদিও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শান্তির জন্য জরুরি হলেও বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
এদিকে, আসিয়ান গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিজেও একটি শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। কম্বোডিয়া তা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও থাইল্যান্ড কেবল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে ১১শ শতাব্দীর প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালত মন্দিরটি কম্বোডিয়ার বলে রায় দিলেও, ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় ফের উত্তেজনা শুরু হয়। সম্প্রতি কম্বোডিয়া ফের আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হলেও, থাইল্যান্ড বলছে—এটি কেবল দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানযোগ্য।
১০৫ বার পড়া হয়েছে