পুলিশের গুলি সেদিন প্রাণ নিতে না পারলেও আজ বেঁচে আছে নিষ্প্রাণ হয়ে

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫ ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন রাজধানীর মেরাদিয়ার নোয়াপাড়ার যুবক আমির হোসেন (২০)।
আজ সেই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। জীবনযাপনে সীমাবদ্ধতা, কর্মহীনতা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে জীবন পার করছেন এই তরুণ।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর বনশ্রী-মেরাদিয়া এলাকায় আন্দোলনকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন আমির হোসেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা অবস্থায় তার ওপর গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
‘ছয়টি গুলি আমার দুই পায়ে লাগে’
সেই দিনের ঘটনা স্মরণ করে আমির বলেন, “আমি হোটেলে কাজ করে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয় পেয়ে পাশে থাকা নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে উঠি। ওরা পিছু নেয়। আমি বাঁচতে রড ধরে ঝুলে থাকি। এরপরও ছয়টি গুলি করে আমার দুই পায়ে মারে। আমি বার বার বলেছি আমি আন্দোলনের কেউ না, কিন্তু শোনেনি। নিচে লাফ দিতে বলছিল, কিন্তু নিচে ইট-রড থাকায় ঝাঁপ দেইনি।”
ঘটনার পর হৃদরোগ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। এখনো দুই পায়ে ছয়টি গুলির চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভারী কাজ কিংবা চাপ দেওয়া যাবে না।
‘এক বছরেও কেউ খোঁজ নেয়নি’
এক বছর পর কেমন আছেন—এমন প্রশ্নে আমির হোসেন বলেন, “আগের মতো চলাফেরা করতে পারি না। ভারী কিছু তুলতে পারি না। এখন দোকানদারি ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না। কিন্তু সেই পুঁজিটুকুও নেই আমার হাতে। এক বছর ধরে আমার খোঁজ কেউ নেয়নি। মোটামুটি সহায়তা বলতে দুই লাখ টাকা পেয়েছি। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন একটা রিকশা দিয়েছিল, কিন্তু সেটা চালিয়ে পায়ে আবার ব্যথা ওঠে।”
বিচারের দাবি, কিন্তু অগ্রগতি নেই
আমির হোসেন জানান, তার ওপর গুলি চালানো পুলিশের মধ্যে মাত্র একজন গ্রেফতার হয়েছেন, আরেকজন পলাতক। “সব তথ্য, ছবি, ফুটেজ আছে। তারা রামপুরা থানার পুলিশ ছিল। তাহলে কেন সবাইকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না?”—প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আইনি লড়াইয়ে না যাওয়ার বিষয়ে বলেন, “মামলা করতে বলেছিল অনেকে, কিন্তু খরচ, ঝামেলা আর যদি উল্টো চাপ আসে—সেই ভয়ে মামলা করিনি।”
ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরেছেন
আমিরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। মাকে হারিয়ে তিন ভাই-বোন ঢাকায় ফুপুর বাসায় ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় কাজ করতে না পেরে দুই মাস আগে আবার গ্রামে চলে গেছেন। এখন বাবা ও বড় ভাইয়ের আয়ে চলতে হচ্ছে। নিজে কিছু করতে চাইলে প্রয়োজন সহযোগিতা।
“ঢাকায় আর যাব না। যদি গুলি না খেতাম, ঢাকাতেই রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতাম। এখন গ্রামেই থাকতে হবে,”—বললেন আমির।
অভ্যুত্থানের পরও হতাশা
২০২৪ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক পালাবদলের পর জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের আশা করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে মনে করেন তিনি। “ভাবছিলাম জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিন্তু চাল-ডাল আগের মতোই দামি। আমাদের মতো গরিব মানুষের কষ্ট কমেনি।”
সহায়তা চান, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান
সবশেষে আমির বলেন, “আমি দোকান দিতে চাই। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছে, কিন্তু পুঁজি নেই। কেউ যদি পাশে দাঁড়ায়, তাহলে অন্তত একটা স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারি।”
১২২ বার পড়া হয়েছে