মতামত

রাজনৈতিক কৌশল ও জামায়াতে ইসলামী

নূরুল কবীর
নূরুল কবীর

শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫ ১২:১৮ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে ছিল।
তারপর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করার সুযোগ আসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর।

বিএনপির সঙ্গে সখ্য করে জামায়াতে ইসলামী সংগঠন গুছিয়ে নিতে থাকে। স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামীর পলাতক নেতা গোলাম আজম, নিজামীসহ অন্যান্য নেতা দেশে প্রত্যাবর্তন করে।


এরপর জামায়াতে ইসলামী কৌশলে সকল দলের সঙ্গে মিশে যায়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াতে ইসলামী অন্যান্য দলের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেয়। পৃথক ব্যানারে বা মঞ্চে যুগপৎ আন্দোলন করে তাদের শক্তিমত্তার প্রকাশ করে। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বয়কট করে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়; উক্ত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও অংশ নেয় এবং কয়েকটি আসন লাভ করে।


এরশাদ সরকারের পতনের পর ক্রমশই জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে সবল হতে থাকে। এরপর ১৯৯১ এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে কয়েকটি আসন পায় জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৫ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সফলতা পায় ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও কয়েকটি আসন পায়।


এরপর ২০০০-২০০১ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী। শুধু তাই নয় জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন করে এবং সরকার গঠন করে। সেই সরকারে জামায়াতে ইসলামী দুইজন (মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ) মন্ত্রী পায়।


১/১১ এ ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সময় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন। তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা কেউ গ্রেফতার হননি। বরং জামায়াতে ইসলামী তখনকার আর্মি ব্যাকড তত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করে সাংগঠনিক কাজ করে যায়।
এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়।


এভাবে কেটে যায় ১৬ বছেররেও বেশি সময়। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার করে সাজা দেয়। এই সাজায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং কার্যকর করা হয়। কয়েকজনকে জেল-জরিমানা করা হয়।


২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেয়। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।
গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামী বেশ ভাল অবস্থানে আছে।


অর্থাৎ জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিক কৌশল অথবা কূটকৌশল দুটোই ভাল জানে। তারা বড় দুটি দলের সঙ্গে প্রয়োজনমতো বা সুযোগ মতো সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বেশ সুন্দরভাবে সংগঠনকে মজবুত করে নিতে পেরেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডারদের অধিষ্ঠিত করতে পেরেছে। জেলায় জেলায় তারা তাদের শক্তিমত্তার জানান দিচ্ছে।
এভাবে কতদূর এগিয়ে যাবে স্বাধীনতা বিরোধী দলটি? কারণ ইতোমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।


এখন বিএনপির সঙ্গে কতটা রাজনৈতিক কৌশলে চলে জামায়াতে ইসলামী দলকে সাংগঠনিকভাবে সুদৃঢ় করতে পারবে সেই অংকের হিসাব আমরা জানতে পারবো আগামীতে।

লেখক:  সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন