বড় দলের 'অফার' পেয়েও নিরপেক্ষ থাকতে চান সাঈদের বাবা

বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫ ৪:২৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন জানিয়েছেন—জামায়াত ও বিএনপি তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাঁরা এখনো নিরপেক্ষ অবস্থানেই থাকতে চান।
গত ২ জুলাই, রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামের মাটির ঘরের বারান্দায় বসে এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানান মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে ও তাঁর অন্য ছেলেদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে তাঁদের ইচ্ছা, শহীদের আদর্শকে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা।
মকবুল হোসেন বলেন, পরিবারের ছেলে শহীদ হয়েছেন দেশের জন্য। এখন তাঁরা চান না শহীদের নাম কোনো একটি দলের সঙ্গে জড়াক। তিনি বলেন, “সবাই ডাকে, কিন্তু আমরা যাই না। আমরা নিরপেক্ষ থাকতে চাই। শহীদ আবু সাঈদকে সবার করে রাখতে চাই।”
তবে তিনি স্বীকার করেছেন, বয়সের কারণে পরিবারের সব সিদ্ধান্ত এখন তাঁর ছেলে-মেয়েরাই নেয়। তিনি বলেন, “ওরা ঢাকায় থাকে, কী করবে জানি না।”
তিনি জানান, জামায়াত থেকে সরাসরি অফার এসেছে, বিএনপিও তাঁদের সঙ্গে থাকার কথা বলেছে। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ এখনো কিছু বলেনি, তবে এনসিপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর ছেলেদের যোগাযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
গত ১ জুলাই, এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর কবর জিয়ারত করেন। তাঁরা মকবুল হোসেনকে জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ না বলে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে।
এই সিদ্ধান্তে মকবুল হোসেন অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আবু সাঈদের নামেই দিবসটা থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, তাঁর ছেলেটি মেধাবী ছিল, কিন্তু গরিবের জন্য চাকরি পাওয়া আজও কঠিন। পাশের বাড়ির ছেলেও মাস্টার্স শেষ করেছে, কিন্তু বেকার। এই বাস্তবতায় ভীত হয়েই হয়তো আন্দোলনে নেমেছিল আবু সাঈদ।
তাঁর অভিযোগ, সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ৩০ লাখ টাকা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো তাঁরা কোনো টাকা বা সুবিধা পাননি। তিনি বলেন, “টিভিতে শুনেছি, ইউনূস সাহেবের সরকার ৩০ লাখ করে টাকা দেবে, কিন্তু আমরা এখনো কিছুই পাইনি।”
ছেলের মৃত্যু আজও তাঁকে তাড়া করে ফেরে। তিনি বলেন, আন্দোলনে ছেলেটা নামবে, তা আগে জানতেন না। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই জানলেন—ছেলেটা আর নেই।
১২৪ বার পড়া হয়েছে