‘সহানুভূতির নম্বর’ বন্ধ, এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫-এ ধস

শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫ ৯:০৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নে ‘সহানুভূতির নম্বর’ নীতির অবসান ঘটায় প্রকাশ পেয়েছে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধার প্রতিফলন—তবে এর ফলে রেকর্ড পরিমাণ পাসের হার ও জিপিএ-৫-এ ধস নেমেছে। শেষ ১৫ বছরে এত খারাপ ফল আর হয়নি।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার আগেই সতর্ক করেছিলেন, এবার ‘সহানুভূতির নম্বর’ বা অতিরিক্ত নম্বর প্রদানের কোনো সুযোগ থাকবে না। সেই ঘোষণা অনুযায়ী এবারের ফলাফলে সরকার কোনো ধরণের গ্রেস নম্বর দেয়নি। অতীতে পরীক্ষার্থীদের খাতায় ২৮ পেলে ৩৩ করে পাস করানো বা কয়েক নম্বর বাড়িয়ে গ্রেড উন্নীত করার যে অলিখিত নিয়ম চালু ছিল, তা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “এবার প্রকাশিত ফলই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ফল। কোনো গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়নি, উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এবার কোনো রকম চাপ ছাড়াই খাতা মূল্যায়ন হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে একটি বড় পরিবর্তন।
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন।
গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে ছিল সর্বোচ্চ পাসের হার—৯৩.৬ শতাংশ।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে গণিতে। বরিশাল, কুমিল্লা, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। বরিশালে গণিতে পাস করেছে মাত্র ৬৪.৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী।
একইভাবে ময়মনসিংহে ৬৪.২৭%, দিনাজপুরে ৭১.৩৫% এবং কুমিল্লায় ৭২.০১% পাস করেছে।
শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের গাণিতিক ধারণা দুর্বল হওয়া, মানসম্মত পাঠদানের ঘাটতি, শিক্ষক সংকট ও কোচিং-নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা এ ফলাফলের জন্য দায়ী।
ঢাকা বোর্ডে নগর এলাকার শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮০ শতাংশের ওপরে, অথচ একই বোর্ডের অধীনে টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জে পাসের হার যথাক্রমে ৬৩ ও ৬৭ শতাংশ। এই বৈষম্য আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে শহর-গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যবধান।
এ বছর ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫১টি। অন্যদিকে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে।
এবারও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় ভালো করেছে। মেয়েদের পাসের হার ৭১.০৩ শতাংশ, ছেলেদের ৬৫.৮৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। টানা ১০ বছর ধরে মেয়েরাই পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে।
বরিশাল বোর্ডের ফলাফল সবচেয়ে খারাপ হয়েছে ইংরেজি ও গণিতে। ইংরেজিতে পাস করেছে ৬৯.৬৬ শতাংশ, গণিতে মাত্র ৬৪.৬২ শতাংশ। বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, “সহানুভূতি নম্বর না দেওয়ায় প্রকৃত ফল প্রকাশ পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বোর্ডের ফলাফলে।”
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ফলাফলে অভিভাবকরা হতাশ। শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ শুধুমাত্র নম্বর কমানোর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান নিশ্চিত হয় না।”
১১২ বার পড়া হয়েছে